ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধে আটক-১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 16 June 2022, 289 বার পড়া হয়েছে,
আদিত্ব্য কামাল : যে কিশোরদের ওপর ভর করে একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের চিন্তা করা হচ্ছে, যারা বড় হয়ে একসময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে, সেই কিশোররাই আজ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। চুরি, হত্যা, ছিনতাই সংঘর্ষ’সহ নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় তাদের অভিভাবকদের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও বেড়ে চলেছে কিশোর অপরাধের মাত্রা।
অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে শহরের লোকনাথ রায় চৌধুরী কমপ্লেক্স ময়দান (টেংকের পাড়) থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫জন ছাত্র’সহ কিশোর গ্যাংয়ের ১৯জনকে আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ। আটককৃতদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

আটক কিশোররা হলেন, শহরের মধ্যপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে জুম্মান উদ্দিন (১৫), ফুলবাড়িয়ার এ.কে.এম ফজলুল হকের ছেলে ফায়াজ ফারমিদ মোবিন (১৪), উত্তর পৈরতলার মোঃ সোহেল মিয়ার ছেলে মেরাজুল হক সৌরভ (১৭), মধ্যপাড়ার মুকুল পালের ছেলে সূর্য পাল (১৬), কাজীপাড়ার সুকুমার দাসের ছেলে ছানি দাস, পূর্ব পাইকপাড়ার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোঃ রিপন (১৮), লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়) এলাকার আবু ছায়েদের ছেলে মোঃ বাবুল (২০), খৈয়াসারের এমদাদুল হকের ছেলে আশরাফুল হক পায়েল (১৮), পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি এলাকার আলমগীর ভূইয়ার ছেলে আলমাস ভূইয়া (২০), কাজীপাড়ার তরুণ বণিকের ছেলে দিপানজন বণিক, কান্দিপাড়ার আনিসুর রহমানের ছেলে রোহান রহমান ওয়াছি, পশ্চিম পাইকপাড়ার নাসির আহমদ খানের ছেলে জাফল উল্লা খান, হালদার পাড়ার সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের ছেলে মোঃ সাহিদ হাসান, বিজয়নগর উপজেলার পত্তন গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল হাসনাত আসিফ, আখাউড়া উপজেলার হিরাপুর গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে মোঃ সিয়াম ভ‚ইয়া (১৭), নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সরকারের ছেলে পাপন সরকার (১৭), একই উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামের মোঃ জামিরুল ইসলাম ও নবীনগর উপজেলার খরিয়ালা গ্রামের আবদুল হেকিমের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাশ শুরু ও ছুটির সময় কিশোর গ্যাংয়ে সদস্যরা হালদারপাড়ার সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেনের সামনের রাস্তা, কাজীপাড়ার সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, হালদারপাড়া গভঃ গালর্স উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, মৌড়াইল অবকাশ এলাকার ফারুকী পার্কের সামনে, সরকারী মহিলা কলেজের হোস্টেলের সামনে, পাইকপাড়া আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়), ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক মার্কেটের সামনেসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে স্কুলের ছাত্রীদেরকে ইভটিজিং করে।

বিশেষ করে ফারুকী পার্ক ও লোকানাথ উদ্যানে (টেংকেরপাড়) কিশোর গ্যাংয়ের পদচারনা থাকে বেশী। শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওই দুটি জায়গায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। সুযোগ পেলে পথচারীদের ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। গত ১৫ দিনে লোকনাথ উদ্যানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিপক্ষের কিশোরদের মারধোরসহ বেশ কয়েকটি অপরাধ কর্মকান্ড করে। প্রায় ১ মাস আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এক কলেজ ছাত্রীকে মারধোর করে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালী পরিবারের বিধায় তাদেরকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। তাই দিন দিন বাড়ছে তাদের দৌরাত্ম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতায় আমরা আতঙ্কিত। তিনি কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা আরো জোরদার করার দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, ১৯জন কিশোর অপরাধীকে আটক করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ১৫ জন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ড্রেস পড়া। লোকনাথ উদ্যানে প্রায়ই অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করে। তাদের অনেকের পকেটেই চাকু থাকে। তিনি বলেন, স্কুলের প্রধান ও তাদের অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে শহরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম।