আখাউড়া স্থলবন্দরে চূর্ণ পাথরের বদলে ধুলো আমদানি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 16 December 2022, 88 বার পড়া হয়েছে,
নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চূর্ণ পাথরের (ব্রোকেন বা ক্রাসড স্টোন) বদলে পাথরের ধুলো (স্টোন ডাস্ট) আমদানি করার অভিযোগ উঠেছে। কাগজে-কলমে চূর্ণ পাথর হিসেবে আমদানি করা দুই হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ওই পণ্য পরীক্ষার পর আটকে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে আমদানিকারককে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বন্দর দিয়ে যে কোড ব্যবহার করে এ পণ্য আনা হয়, সেটিই তাঁরা এখানে করেছেন। জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো কাগজে-কলমে পাথর আমদানি করা হয় গত ১৩ নভেম্বর। কয়েক দফায় দুই হাজার ৭০০ টন আমদানি করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলো খলিফা এন্টারপ্রাইজ। এটির মালিক আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল। এসব পাথর আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। আমদানি করা ‘পাথরের’ মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি মেট্রিক টন ১৩ মার্কিন ডলার। এসব পণ্য স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। আখাউড়া শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত (৭ ডিসেম্বর) এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের মাধ্যমে আনা পণ্য খালাসের জন্য তাদের মনোনীত এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজ শুল্কায়নের জন্য আবেদন করে। এ বিষয়ে চার সদস্যের একটি কমিটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী আমদানি ঘোষিত পণ্য ব্রোকেন অথবা ক্রাসড স্টোনের (চূর্ণ পাথর) সঙ্গে আমদানি করা পণ্যের মিল নেই। আমদানি করা পণ্য হলো ০.১ এমএম থেকে ০.৬ এমএম পর্যন্ত স্টোন ডাস্ট, যা আমদানিযোগ্য পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআরও-এর বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটি কাস্টমস আইনের পরিপন্থী ও অর্থদণ্ডসহ চালানটি বাজেয়াপ্তযোগ্য। চালানটি বাজেয়াপ্তসহ কেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ১০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে হবে। খলিফা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন ও আমজাদ হোসেন রিপন জানান, দেশের আরো বিভিন্ন বন্দর দিয়ে যে কোডের মাধ্যমে এটি আসছে এখানেও তাই করা হয়েছে। প্রথম দফা আনার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায় সব আনার পর অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, এটির অনুমতি নেই। তাই এখন প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে পণ্য রাখার কারণে। এতে বেশ লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে।
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না। মূলত অন্যান্য বন্দর দিয়ে একই কোডে এ ধরনের পণ্য আসে। আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ও পাথর আমদানি বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলকারীদের একজন মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পাথরের কোড ব্যবহার করে পাথরের ডাস্ট আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তা বাস্তবায়ন করব। গতকাল দুপুরেও স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে খোলা আকাশের নিচে এসব পণ্য একাধিক স্তূপে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খালিচোখে এসব পণ্য পাথরের ‘ধুলা’ মনে হয়। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।