আখাউড়ায় জাল দলিল তৈরিকারী রফিক ভেন্ডার ও তার ভাই কারাগারে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 4 September 2022, 188 বার পড়া হয়েছে,

মো. জুয়েল মিয়া,নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জাল দলিল তৈরির মূল হোতা রফিকুল ইসলাম ভেন্ডার ও তার ভাই ফারুক মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা পৌরসভার রাধানগর গ্রামের কলেজপাড়ার বাসিন্দা মৃত দুবরাজ ভূইয়ার ছেলে। তারা জাল দলিল তৈরি করে একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারের বাড়ি দখলের চেষ্টা করে। এই ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার আদালতে মামলা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগকারী আব্দুস সাত্তার মুক্তি যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শহীদ স্মৃতি কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে নাইটগার্ড হিসাবে চাকুরি করে আসছে। মোট ৪০ শতক সম্পত্তির একক মালিক ছিলেন মহানন্দ ঘোষ । স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি বর্ণিত সম্পত্তি শহীদ স্মৃতি কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে দান করে দেন। আব্দুস সাত্তার তখন থেকেই কলেজের মালিকানাধীন ১৩২ নং নাগের ০৩ শতক ভূমিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মাটি ভরাট করে ঘর নির্মান করে বসবাস করতে থাকে। পরে নাইট গার্ডের চাকুরী হতে অবসরে যাওয়ার পর কলেজ মসজিদের মোয়াজ্জিন হিসাবে স্থায়ী ভাবে চাকুরী করতে থাকে। তিনি ছেলে মেয়ে ও পরিবার নিয়ে কলেজের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে দীর্ঘকাল বসবাস করা কালে কেউ সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে নাই।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এলাকার চিহ্নিত জাল দলিল তৈরিকারী রফিক ভেন্ডার পূর্বেও একাধিক জাল দলিল তৈরি করে সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে। তার বিরুদ্ধে আদালতে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা চলমান আছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আখাউড়ায় সাব-রেজিস্ট্রার সহ কিছু অসাধু দলিল লেখক ও ভেন্ডাররা মিলে নামজারী খতিয়ান ব্যতিত দলিল সম্পাদন করায় একদিকে অনেক ওয়ারিশ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব।

সিআইডি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কর্তৃক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায় , জনৈক জানু মিয়া ১৯৭৩ সালে বিরোধীয় ০৩ শতক ভূমি লাল মোহন ঘোষের নিকট হতে ক্রয় করে । কিন্তু এসএ খতিয়ান মূলে লাল মোহন ঘোষের চাচা বর্ণিত সম্পত্তির একক মালিক হওয়ায় লাল মোহন ঘোষ এই সম্পত্তির ওয়ারিশ এবং বিক্রি করার ক্ষমতা রাখে না। জমির প্রকৃত মালিক মহানন্দ ঘোষ এর ০৪ ছেলের মধ্যে ০৩ ছেলে ভারতে চলে যায় এবং ০১ ছেলে বিধু ঘোষ দেশে বসবাস করে । তাদের মধ্যে কেউ বিরোধীয় সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে নাই এবং বিরোধীয় সম্পত্তি কারো নিকট হস্তান্তর করে নাই । ফলে জানু মিয়ার দলিল মূলে পরবর্তীতে সম্পাদিত হওয়া অন্যান্য দলিলের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। এই অবস্থায় অগ্রহণযোগ্য মালিক জানু মিয়ার নিকট থেকে অন্যায় ভাবে ২০০৪ ইং সালে ভূমিটি ক্রয় করে মামলার বিবাদী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ফারুক মিয়া । ২০০৫ সালের পূর্বে কেউই বিরোধীয় সম্পত্তির নিজ মালিকানা দাবী করে নাই । কিন্তু অত্র মামলার বিবাদীরা আখাউড়া সাব রেজিষ্টি দলিল সম্পাদন করার পর হতে বিরোধী ০৩ শতক সম্পত্তি দাবী করতে থাকে।

পূর্বে জানু মিয়া কোন দিনও উক্ত ভূমির ভোগদখলে ছিল না এবং ভূমিটি রফিক মিয়া গং ও উক্ত নালিশা ভূমিতে দখলে ছিল না । বর্তমানে উক্ত নালিশা ভূমিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে এবং আব্দুস সাত্তার বসবাস করে আসছে ।

তদন্তে আরও প্রমাণিত হয়, সম্পত্তির প্রকৃত মালিক মহানন্দ ঘোষ এবং কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বর্ণিত সম্পত্তি কলেজের ভোগ দখলে ছিল । তৎপরবর্তীতে মহানন্দ ঘোষের কোন ওয়ারিশ বর্ণিত সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে নাই এবং বর্ণিত সম্পত্তির বিপরীতে কোন প্রকার দলিল সম্পাদান করে নাই ।

রফিক ভেন্ডার গংরা যেই মূলে বিরোধীয় সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে সেই দলিলের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কারন বৈধ মালিকের নিকট হতে রফিক ভেন্ডার গংরা সম্পত্তি ক্রয় করে নাই । তারা বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে দায়ের করা দেওয়ানী মামলা উঠিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আব্দুস সাত্তারের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দুইটি খালি ষ্ট্যাম্পে আপোষ নামা সম্পাদনের কথা বলে স্বাক্ষর গ্রহণ করে । পরবর্তীতে তারা উক্ত স্বাক্ষরকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করে ” বসত বাড়ি ভাড়াটিয়া চুক্তি পত্র ” সম্পাদন করে আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে ২,২৩,৫০০ / – ( দুই লক্ষ তেইশ হাজার পাঁচশত ) টাকা দাবী করে বিজ্ঞ আদলতে মামলা দায়ের করে । তদন্তে জানা যায় , বিবাদী রফিক পেশায় একজন ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার এবং বাদী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহজসরল স্বল্পশিক্ষিত লোক । যার ফলে রফিক ভেন্ডার সহজেই প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

আখাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রতারণার মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী রফিক ভেন্ডার ও তার ভাই ফারুক মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।