আবারও আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর বাদল

সারাদেশ, 13 September 2024, 52 বার পড়া হয়েছে,
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : শাহজালাল বাদল, নারায়ণগঞ্জের এক আলোচিত নাম। পর পর তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে। তার আরেক পরিচয় তিনি নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের ভাতিজা।
নারায়ণগঞ্জে আবারও আলোচনায় শাহজালাল বাদলের নাম। চলতি বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে সাইনবোর্ড এলাকায় আজমেরি ওসমানের নেতৃত্ব সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এসময় আজমেরি ওসমানের সাথে অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর বাদল। আজমেজি ওসমান ও বাদলসহ অন্যান্যরা ছাত্রদের ওপর চালায় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি। এই ঘটনায় নিহত হয় মাছ ব্যবসায়ী মিলন।
এই ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট নিহত মিলনের  স্ত্রী বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এক আলাদা ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। তার নেপথ্যে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলোচিত শামীম ওসমান। শামীম ওসমানের ছাত্রছায়ায় গত এক দশকে কাউন্সিলর বাদল গড়ে তুলেছেন শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে, বাদলকে চাঁদা না দিয়ে এলাকার অনেকেই গার্মেন্টেসের ব্যবসা করতে পারতেন না। চিটাগং রোড বাস স্ট্যান্ড আর ট্রাক স্ট্যান্ডেও ছিল শাহজালাল বাদলের আধিপত্য। আর  এসব স্থানে সহযোগী তার চাচা নুরুদ্দিন (নাসিক ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর) এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জজ মিয়া। স্থানীয়রা জানান, বহু বছর ধরেই বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস এবং এই ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে বিপুল অংকের চাঁদাবাজি করে গেছে বাদলের চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় বাদল সরকারি ডিএনডি খালে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে গেছেন। এছাড়া চিটাগং রোডের উপকণ্ঠে অবস্থিত মার্কেটেগুলোও ছিল বাদলের চাঁদাবাজির টার্গেট। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জমি দখল করে তথাকথিত সাজু সিটি গড়ে তুলার পেছনে কারিগর বাদলকে অনেকে চেনেন ভূমিদস্যু হিসেবে।
এতো অবৈধ সম্পদে পাহাড় কাউন্সিলর বাদল শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। এসব সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ, মালয়শিয়াসহ অন্যান্য স্থানে। বিশাল এক বাহিনী আর ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনের কারণে তার বিরুদ্ধে এত দিন কেউ অভিযোগও করতে পারেনি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহজালাল বাদল জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তার চাচা নূর হোসেনের মত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরে ক্ষমতার পালাবদলে তিনি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর আওয়ামীলীগ নেতা।
২০১৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হালনাগাদকৃত ৪৩ জন সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠা শাহজালাল বাদলের উত্থান ছিল নাটকীয়। আলোচিত সাত খুন হত্যার ঘটনার পরে ২০১৫ সালে অস্ত্র মামলায় কারাগারে যেতে হয় বাদলকে। তবে সে যাত্রায় তাকে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি আর বাইরে বের হয়েই শুরু হয় তার নতুন রাজত্ব!
২০২২ সালের নাসিক নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যান আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী আলমগীর। তবে শাহজালাল বাদলের সবচেয়ে রহস্যজনক অধ্যায়টি রয়েছে তার প্রথম স্ত্রী সাদিয়া নিঝুর মৃত্যুর সাথে। বেশ কয়েকবার বাদলের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার পর চাষাঢ়া রেললাইন থেকে নিঝুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাই এটা হত্যা না আত্মহত্যা তাও এখনো রহস্য রয়ে গেছে।
পতন হয়েছে হাসিনা সরকারের। এখন আবারও চাচা নুর হোসেন আর বাদল চক্র ভোল পাল্টে আবারো কি বিএনপি এর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পায়তারা করছেন। চেষ্টা চালাচ্ছেন এবার বিএনপিতে যোগদানের।