১০ লাখ টাকা দেনমোহর ধরায় নানা ও মামা শ্বশুরকে পেটালেন জামাই

সারাদেশ, 14 August 2021, 474 বার পড়া হয়েছে,

সাভারের কাজীপাড়া এলাকায় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাতনীকে নিতে আসায় নানা ও মামা শ্বশুরকে পানির পাইপের সাথে গামছা দিয়ে বেঁধে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে জামাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নানা ও মামা শ্বশুরের সাথে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও ওই জামাই ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় মামলা না করার শর্তে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে স্থানীয়রা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগী নানা ও মামাকে উদ্ধার করেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নানা আব্দুল মান্নান সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ বাবা-ছেলেকে বৃহস্পতিবার আটক করেছে। মধ্যযুগী কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার খাসেরচর গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে মো: আব্দুল মান্নান (৫৮) ও তার ভাগনে শহিদ মোল্লা (৫৩)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুর কাজীপাড়া গ্রামের বশির মহাজনের ছেলে আবুল কালামের সাথে গত ১ বছর আগে সিংগাইর থানার খাসেরচর গ্রামের মো: আব্দুল মান্নানের নাতনী সোনিয়া আক্তারের (১৯) সাথে ১০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। গত ১০ আগস্ট বিকেলে নানা আব্দুল মান্নান ও তার ভাগ্নে শহীদ মোল্লা নাতনী সোনিয়াকে দেখতে যায়। তখন নাতনীর জামাই মো: আবুল কালাম (২৮), তার ভাই মো: সালাম (২৫) ও বাবা বশির মহাজনসহ পরিবারের লোকজন কালামের খালার বাড়ি একতলা বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে পানির পাইপের সাথে গামছা দিয়ে বেঁধে মারধর ও মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। পরে তাদের কাছে থাকা ২৬ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোবাইল, নগদ সাড়ে ৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর রাতে তাদেরকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে দুটি সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদেরকে উদ্ধার করেন।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল মান্নানের ছেলে ফরিদুর রহমান জয় সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ১১ মাস আগে তার বোনের মেয়ে সোনিয়া আক্তারের বিয়ে হলেও বিয়ের দেড়মাস পর তার ভাগনীকে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন মিথ্যা অপবাদ দিতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে আমরা ভাগনীকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এসে তাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু এলাকাবাসীর অনুরোধে ভাগনীকে আবার শ্বশুর বাড়িতে যেতে দিলে তখন থেকে আমার ভাগনীকে আর বাড়িতে আসতে দেয় না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার সুযোগ দিত। আমার ভাগনীর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমরাই দেখা শুনা করি। ভাগনী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় গত ১০ই আগস্ট আমার বাবা ও আমার ফুফাত ভাই আমার ভাগনীকে বাড়িতে নিয়ে আসতে তার শ্বশুরবাড়ি যাই। এ সময় ভাগনী জামাই কামাল ও তার বাবা বসিরসহ ৮ থেকে ১০ জন বেলা দেড়টার দিকে আমার বাবা ও ভাইকে দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে একটি বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকির পাইপে বেঁধে নির্যাতন করে। আমার বাবা ও ভাইকে নির্যাতনের একপর্যায়ে আমরা কাবিনের ১০ লাখ টাকা তাদের কাছে দাবি করছি এমন একটি স্বীকারোক্তি আদায় করে আমার বাবা ও ভাইয়ের মুখ থেকে এবং অভিযোগ না করার মর্মে সাদা স্ট্যাম্পে সইও নেয়। অভিযোগ করলে পরবর্তীতে আমার ভাগনীকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয়। ওই নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সন্ধ্যায় আমার ভাগনী জামাই কামাল আমার মোবাইল ফোনে পাঠায় এবং বলে যদি ১০ লাখ টাকা দিয়ে তোমার বাবা ও ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

সাভার মডেল থানার ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের (এসআই) নাজিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে।

সাভার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বিকেলে জানান, দুই ব্যক্তিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং দুজন আটক হয়েছে।