দেখতে দেখতে মাহে রমজান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতে চলেছে। চারদিকে ঈদের কেনাকাটার ধূম লেগেছে। স্বপ্ন যাবে বাড়ি। সকলের প্রত্যাশা পূর্ণ হোক। সকলকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।
বাসে,ট্রেনে ও লঞ্চে চড়ার সময়ে সাবধান। হতে পারে আপনার পাশে দাঁড়ানো স্মার্ট কলেজ পড়ুয়া যুবতী বা সুন্দরী তরুণী অথবা কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলা অথবা হ্যান্ডসাম যুবক আদতে পেশাদার পকেটমারও হতে পারে।
চলন্ত সিঁড়ির স্থান, বিনোদন পার্ক, এটিএম বুথ, মার্কেটের সামনে, ক্যাশ মেশিন, বাস স্টপ, ব্যস্ত সড়ক, রেস্টুরেন্ট টেবিল এবং ফটোগ্রাফির স্থানে দলবদ্ধ পকেটমাররা কৌশলে অাপনার পকেট খালি করে ঈদে বাড়ি ফেরার অানন্দটুকু মাটি করে দিতে পারেন। রাস্তায়, ফুটওভার ব্রিজে, যানবাহনে, বাসে, ট্রেনে বাজারে, মেলায় একটা সাধারণ আতঙ্ক হচ্ছে ‘পকেটমার’। এই হাতচালানি পেশাদারদের কবলে পড়েননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। একজন সচেতন মানুষ হয়ে আমি লেখক নিজেও এদের কবলে পড়েছি বারংবার। অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলা যায়, হাত সাফাই তো আছেই, সাথে মানবমস্তিষ্কের দুর্বলতাকেই মূলত কাজে লাগায় পকেটমাররা। রাস্তায় হাঁটছেন। হঠাৎ এক ভদ্রলোক উপহার দেয়ার জন্য পিড়াপীড়ি অথবা মনোহারির দোকানদার সস্তায় আকর্ষণীয় জিনিস কম দামে গছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। ফুটপাতে ভিড়ের ভিতর প্রয়োজনীয় কিছু একটা কেনাকাটা করছেন; কিছু দূর গিয়ে হাতিয়ে দেখলেন পার্স বা পকেটে টাকা নেই। অথবা কোনো ভিখারিকে দেখে দয়া করে ২০ টাকা দিতে গেলেন কিন্তু সে অবাক করে দিয়ে ওতো টাকা না নিয়ে পাঁচ টাকার জন্য জিদ ধরলো। পার্স খুলে খুচরা টাকা বের করছেন আর ওই ফাঁকে সে দেখে নেবে কতো টাকা আপনার পকেটে। এরপর জায়গামতো সময় বুঝে হাত চালাবে। অথবা মসজিদ মাদরাসা এতিমখানার জন্য টাকা চাইতে এসেও আপনার মানিব্যাগটা চেক করে যেতে পারে।
এই ট্রিকসগুলোর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। মানুষ বা অন্য যেকোনো প্রাণীকে বোকা বানানোর মতো কিছু কৌশল আছে। এই দুর্বলতা মানুষের মস্তিষ্কের গঠনেই রয়ে গেছে। একে বলে ‘লুপহোল’ বা চোরাগলি। পকেটমার হওয়ার জন্য শুধু চতুর আঙ্গুল থাকলেই চলে না এই চোরাগলি সম্পর্কেও জানতে হয়।
মানুষের মস্তিষ্ক এক সাথে একাধিক কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। সেই সক্ষমতা তার নেই। আর এটাই জাদুকর বা পকেটমারদের মোক্ষম অস্ত্র! মঞ্চে যারা জাদু দেখান তারা এটাই করেন। হাত সাফাই মানে আসলে তা-ই। রঙিন পোশাক আর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকদের ব্যস্ত রাখে আর সুযোগ বুঝে হাত সাফাই করে জাদুকর। একে বলে ইলিউশন অব চয়েস। যেমন দ্রুত হাত চালানো। মানুষের মস্তিষ্ক .০১ সেকেন্ডের কম স্থায়ীত্ব সম্পন্ন কোনো চিত্র আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে না। ফলে একটা ইলিউশন তৈরি হয়।
সাধারণত নির্জন রাস্তায় যেটা হয়: হঠাৎ এক ভদ্রলোক হনহন করে এসে আপনার সামনে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন থেকে আরেক ভদ্রলোক আপনাকে ক্রস করতে গিয়ে তার সাথে ধাক্কা লাগলো। ব্যস শুরু হয়ে গেল বাকবিতণ্ডা। আপনি তো হতভম্ব। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একটু পরেই দু’জন দু’দিকে চলে গেল পরস্পরকে গালাগাল করতে করতে। আপনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু বাঁচলেন না! বাস ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলেন পকেট ফাঁকা। ক্যামনে হলো? ওই দুই লোকের গোণ্ডগোলের ফাঁকে তৃতীয় একজন আপনার পকেট মেরে দিয়েছে। সে আসলে ছিল তাদেরই লোক। শিকার মাঝখানের জন, দুই পাশে শিকারি বাজারে, ফুটওভারব্রিজে, মেলা, গণপরিবহনে হঠাৎ অতিরিক্ত জনসমাগম হলে পকেট সাবধান! এখানে পকেটমার সিন্ডিকেট এ ধরনের জটলা তৈরি করে পকেট হাতিয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে। অনেক সময় ধরা পড়লেও হঠাৎ এক ভদ্রলোক অতি উৎসাহী হয়ে আগ বাড়িয়ে ব্যাপারটা সমাধানের চেষ্টা করে। হয়ত পকেটমারকে চড় থাপ্পরও মারতে মারতে সরিয়ে নিয়ে যায়। সে কিন্তু ভদ্রলোক নয়, তাদেরই লোক। অথবা মেলায় বা পার্কে বা পার্টিতে অপরিচিত সুন্দরী ললনার সাথে গল্পে মজলে পকেট সাবধানে রাখবেন। পেছন থেকে কেউ মেরে দিয়ে যাবে। সেই ললনা কিন্তু একটা টোপ। পকেট সাবধান! লেখা স্টিকার বা সাইনবোর্ডের নিচে পকেটমারদের সবসময় তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকে। কারণ এসব সাইনবোর্ড দেখলে মানুষ অবচেতন মনেই পকেট হাতড়ে দেখে মানিব্যাগ, মোবাইল ঠিকঠাক আছে কি না।
লেখক : এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।