শাহরাস্তি উপজেলা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হৃদরোগীকে

সারাদেশ, 24 July 2021, 527 বার পড়া হয়েছে,
মোঃ রুহুল আমিন : চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল কমপ্লেক্সের অতিমারী করোনা ভাইরাসে আক্তান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার হচ্ছে হৃদরোগীকে। গেলো ২২ জুলাই বেলা সাড়ে চার ঘটিকায় সরেজমিন গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে।
শাহরাস্তি উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অতিমারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা চলছে। এসময় অতিমারী করোনা ভাইরাসের ওয়ার্ডে বিভিন্ন বয়সী মোট ১০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যে সকল রোগী ঐ সময় করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তারা হচ্ছেন- উপজেলার দহশ্রী গ্রামের আবদুর রশিদ(৬১), মরিয়ম বেগম(৪৫), আলেয়া বেগম(৬০), আফিয়া খাতুন(৬৫), শাহনাজ বেগম(৩০),আয়েশা বেগম(৬৫), নূর জাহান বেগম(৩৮), আলমগীর পাটওয়ারী(৪০), রোকেয়া বেগম(৫০)এবং রুবেল(২৯) এই দশ অতিমারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্থাপিত ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
ভর্তিকৃতদের মধ্যে আবদুর রশিদ শাহরাস্তি উপজেলার মেহার উত্তর ইউনিয়নের দহশ্রী গ্রামেরবাসিন্দা। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারনে শ্বাস কষ্টে ভুগছেন। গুরুতর শ্বাস কষ্টের কারনে তার দুই ছেলে কামাল ও মিলন হাসপাতালে নিয়ে আসে। এসময় বাবার পাশে বসে থাকা বড় ছেলে কামালের নিকট জানতে চাইলাম হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাকে কেন করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন, এতে তিনিওতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে? জবাবে কামাল জানালেন, বাবা দীর্ঘদিন হৃদরোগে আক্রান্ত। বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলছিলো। কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়ি এসেছে। কিন্তু হঠাৎ বাবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে আসার পর ডিউটিরত চিকিৎসক ডা. শ্রাবন্তী চক্রবর্তী ভর্তি দিয়ে এই ওয়ার্ডে পাঠিয়েছেন। আমাদের কি করার আছে চিকিৎসক ভর্তি দিয়েছেন তাই বাবাকে এখানে রেখেছি।  এসময় একজন করোনায় আক্রান্ত এক মহিলা রোগী বলেন, এখানের বাথরুমগুলি এত অপরিষ্কার যেন দেখার কেউ নেই। ঘুরে দেখা গেলো তার কথা সঠিক।
এবিষয়ে মোবাইলে হাসপাতালের টিএইচও ডা. নাসির উদ্দীনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিউটিরত চিকিৎসক এবিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। তার নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। টিএইচও’র পরামর্শ অনুযায়ী ডিউটিরত চিকিৎসক ডা. শ্রাবন্তী চক্রবর্তীর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, উক্ত রোগীর যে পরিমান অক্সিজেন দেয়া প্রয়োজন তার ব্যবস্থা অত্র হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে নাই। ঐ পরিমান ও লেভেলের অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা একমাত্র করোনা ওয়ার্ডে রয়েছে। তাই ঝুঁকি থাকা সত্বেও অগত্যা এই রোগীকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে এবং অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে ২০১৭ সালে। কিন্তু এখনো ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য থাকা লোকবল দিয়ে এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, বয় সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য লোকবল না থাকায় চিকিৎসায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালের নার্স স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় একজন নার্স এক রোগীর অভিভাবকে বলছেন আমরাওতো মানুষ, বিরামহীনভাবে ডিউটি করে যাচ্ছি ৫ জন নার্স দিয়ে কি এত রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব? তাছাড়া আমাদের দুইজন নার্স করোনায় আক্রান্ত। তিনি আরো বলেন, শাহরাস্তি উপজেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়েছে। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এখানে রোগী আসছে। যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে ভর্তি আছেন তাদের এক একজনকে দেখতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় দিতে হচ্ছে, এদিকে অন্য রোগে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে রোগী আসছে। কাউকেই ভালো করে সেবা দিতে পারছিনা। আমরা রোগীদের ভালো করে সেবা দিতে চাই। আপনি পত্রিকার মানুষ আমার কথাগুলো পত্রিকায় লিখুন যদি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে তাতে যদি কাজ হয়।
এবিষয়ে হাসপাতালের টিএইচও বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল পাওয়া গেলে চাঁদপুর জেলা সদর তথা ঢাকার চিকিৎসা আমরা এই হাসপাতাল থেকে দিতে পারবো। আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র ৪ মাস হয়। এই স্বল্প সময়ে এখানে কাজ করতে গিয়ে আমি অত্র এলাকার সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি আশা করি, সাংসদ মহোদয় অত্র হাসপাতালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য স্টাফিং প্যার্টাণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পেতে ও পদায়নের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করবেন। কারণ মাননীয় সাংসদ অত্র এলাকার মানুষের প্রতি অনেক বেশি আন্তরিক যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।