মাদারীপুরের শিবচরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ২ সন্তানের জননীকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রাজ্জাক তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরকীয়া সন্দেহে মোবাইলে কথা বলার জের ধরে স্ত্রী আয়শা আক্তারকে হত্যা করে বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্জাক স্বীকার করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, জেলার শিবচর উপজেলার শিবচর ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের খালেক তালুকদারের ছেলে অটোচালক রাজ্জাক তালুকদার ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়শা আক্তারের (৩০) সঙ্গে পারিবারিক কলহ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। দুজনই দুজনকে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত বলে সন্দেহ করতো।
সোমবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে স্বামী রাজ্জাক তালুকদার এসে স্ত্রী আয়শাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখেন। রাজ্জাক এসে কার সঙ্গে আয়শা কথা বলছে দেখতে চান। রাজ্জাক আয়শার মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে রাজ্জাক কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে আয়শার পেটে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই আয়শার মৃত্যু হয়।
ঘরে চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আয়শাকে নিথর অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা আয়শাকে নিজের ইজিবাইকে করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আয়শাকে রেখে স্বামী রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতাল থেকে নিহত আয়শার লাশ থানা হেফাজতে নেয়। ঘটনার পর রাজ্জাক যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য শিবচর থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমে শিবচরের সব প্রবেশদ্বার নজরদারিতে নেয়।
সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান ও শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ রাতভর অভিযান চালায়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ রাজ্জাক তালুকদারকে (৪২) চরশ্যামাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুসারে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো কাঁচি উদ্ধার করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর পাঠানো হয়েছে।
নিহত আয়শা কালকিনির আ. মান্নানের মেয়ে। আয়শার শাওন নামের একটি ছেলে ও সিনথিয়া নামের একটি মেয়ে রয়েছে।
রাজ্জাকের পাশের বাড়ির গোলেনুর বেগম বলেন, ওই বাড়ির চিল্লাচিল্লি শুনে আমরা দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি ঘরে ওর স্বামী, তার মা, বাবা সবাই। বউ আয়শা কাত হয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি সবাই মিলে ধরে হাসপাতালে আনতেই পেছন থেকে ওরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় রাসেল ফকির বলেন, আয়শা রাজ্জাকের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রায়ই ওদের ঝগড়া হতো। আয়শা অনেকদিন বাপের বাড়িও ছিল।
শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, রাজ্জাককে ধরতে রাতভর অভিযান চালানো হয়েছে। পারিবারিক কলহ, পরকীয়ার সন্দেহ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে সে স্বীকার করেছে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার পেটে ও নাকের উপরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অধিক রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধারালো অস্ত্রটি ছুরিও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রাজ্জাককে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য মাদারীপুর পাঠানো হয়েছে।