মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘মন্ত্রী হয়ে আমার লোকসান হয়েছে। আমার আয় কমে গেছে। আগে আদালতে গিয়ে আইনজীবী হিসেবে পেশাগত কাজ করতে পারলেও এখন সেটা করতে পারি না।
তবে বাস্তবতা হলো কথায় আয় কমলেও তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনেক বেড়েছে। তিনি দুটি ব্যাংকের মালিকানায় নাম লেখান। সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকে তার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
যদিও স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, সিটিজেন ব্যাংকটির মালিক মূলত আনিসুল হক।
তার মা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহানারা হকের নামেই ব্যাংকের অনুমোদন করানো হয়। মায়ের মৃত্যুর পর তৌফিকা আফতাব নামের এক সহকর্মীকে তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বানান। এ ছাড়া একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকানা কিনে সেখানেও বসিয়ে দেন তৌফিকা আফতাবকে।
বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর আনিসুল হক এখন জেলহাজতে আছেন।
তৌফিকা আফতাব এরই মধ্যে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে আলোচনা আছে। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে আনিসুল হককে কেন্দ্র করে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীও ফুলেফেঁপে ওঠেন। মূলত নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিকও বনে যান। আনিসুল হকের সাবেক পিএস রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া জীবন, মন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্টজন ছিলেন। এছাড়া আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল ও তার ভাই ফোরকান আহমেদ খলিফা, আখাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন, আনিসুল হকের পিএ মো. আলাউদ্দিন বাবু, শফিকুল ইসলাম সোহাগ চাকরি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
আদালতের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া ও সাবরেজিস্ট্রার বদলি থেকে ওই সিন্ডিকেট টাকা হাতিয়ে নিত। আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তাও এসব নিয়োগের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এপিএস থেকে চলে এসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অনেক বিষয়েই রাশেদুল কায়সারের কর্তৃত্ব কমতে থাকে। আনিসুল হকের পিএ আলাউদ্দিন বাবুই ছিলেন চাকরি ও বদলি বিষয়ের নিয়ন্ত্রক। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলাউদ্দিন বাবুর প্ররোচণায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই ছাইদুর রহমান স্বপন। এরপর থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেন রাশেদুল কায়সার।
এদিকে আলাউদ্দিন বাবু সরকারের পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।