এক হাত ও এক কান কাটা অবস্থায় শাহজাহানকে ফিরে পায় তার পরিবার। শাহজাহানের বাবা মানিক মিয়া বলেন, তার ছেলে সুস্থ, সবলভাবে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তার অভিযোগ, সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা থাকায় শাহজাহানের মামারা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুলাউড়া চাতলাপুর সীমান্তে ফেলে আসে। পরে ভারতীয় বিএসএফ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছে বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
শাহজাহানের পাশাপাশি ৯ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ঢাকার কেরানীগঞ্জের রীনা বেগমকেও ফিরে পায় তার সন্তান। শাহজাহান ও রীনার মতো আরও চার বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছে।
বগুড়া জেলার দুপচানিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মমতাজের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন জিয়ারুল ৭ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। তার স্বজনরা জানায়, বগুড়া থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় সে কীভাবে পৌঁছলো তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
এছাড়া, ময়মনসিংহের ছমেদ আলীর মেয়ে আল্পনা বেগমের ভাই দুলাল জানান, ৯ বছর আগে হঠাৎ একদিন তাদের বোন নিখোঁজ হন। গত দুই বছর আগে স্থানীয় থানার মাধ্যমে জানতে পারেন আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে আল্পনা চিকিৎসাধীন আছেন আল্পনা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হেলাল মিয়ার স্ত্রী হানিফা আক্তার। মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন সন্তানরা। পরে পুলিশ খোঁজ নিতে বাড়িতে গেলে পরিবার জানতে পারেন আগরতলায় আছেন তার মা।
জামালপুর জেলা সদরের নারিকেলি গ্রামের নবীর উদ্দিনের ছেলে মানিক মিয়াকেও ফিরে পায় পরিবার। নিখোঁজ স্বজনদের কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা আর বাঁধভাঙা খুশি যেন কোনো বাধাই মানছিল তাদের।
সকাল থেকেই ত্রিপুরা সীমান্তের এপারে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন হারানো পরিবারগুলোর স্বজনরা। অপেক্ষার প্রহর শেষে ঠিক দুপুর ১টার দিকে ভারতের ত্রিপুরাস্থ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার জোবায়েদ হোসেন এক এক করে বাংলাদেশিদের আখাউড়া-আগরতলা নো-ম্যান্স ল্যান্ডে নিয়ে আসেন। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আক্তারের মাধ্যমে নিজ পরিবারের কাছে তাদের স্বজনদের তুলে দেন তিনি।
ভারতের ত্রিপুরাস্থ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার জোবায়েদ হোসেন বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ওই ৬জন মানসিক ভারসাম্যহীনকে আটক করে এবং আদালতের নির্দেশে আগরতলা নরসিংগড় মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটালে (মানসিক হাসপাতাল) ভর্তি করে। এতদিন তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ায় ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ দেশে স্বজনদের মাঝে ফেরত পাঠানো হয় তাদের। তবে কোন সীমান্ত পথে তারা ভারত প্রবেশ করেছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কেউ।
ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ফিরে পাওয়া স্বজনদের পরিবার। প্রতিক্রিয়ায় তারা জানান, হারিয়ে যাওয়া স্বজনকে ফিরে পাওয়া অনেক বড় আনন্দের। ওদের কাছে পেয়ে তারা আবেগাপ্লুত, খুশি। বাংলাদেশ-ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
এ সময় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন ছাড়াও সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক চৌধুরী, কমিশনের এস এম আসাদুজ্জামান (প্রথম সচিব, স্থানীয়), বিএসএফ আগরতলা কোম্পানি কমান্ডার রাজকুমার, বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার, আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান, ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মো. আব্দুল হামিদ, মানবাধিকার কর্মী সৈয়দ খায়রুল আলমসহ অন্যান্যরা।