ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইট-পাথরের শহর ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুদের আর্ট ক্যাম্প 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 29 February 2024, 25 বার পড়া হয়েছে,
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবড়িয়া : চারদিকে সবুজে ঘেরা প্রকৃতি আর গ্রাম বাংলার অপার সৌন্দর্য্য। সেই সৌন্দর্য্যকে রং-তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তুলতে ব্যস্ত ক্ষুদে আঁকিয়েরা। কেউ ক্যানভাসে প্রকৃতি, কেউ বিভিন্ন জাতের পশু পাখি, আবার কেউ গ্রাম-বাংলার মেঠো পথসহ জীবন্ত জনজীবন তুলির মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলছেন। পুকুর পাড়, বাড়ির উঠোন, মেঠো পথে বসে সাড়ে তিন শতাধিক শিশু শিল্পীর নিঁখুত রং-তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তুলছেন নানা ধরণের চিত্রকর্ম। ইট-পাথরের শহরে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ থাকা এসব শিশুদের প্রকৃতির মাঝে একাকার করে নিতেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম। প্রকৃতির সান্নিধ্যে
শিশুরা এই ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্প।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্প ঘিরে গ্রাম জুড়ে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে গিয়ে শিশু ও তাদের অভিভাবকরা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। ক্যাম্পের উদ্বোধন উপলক্ষে কাঞ্চনপুর মলাই মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি থেকে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন। এতে
চিত্রশিল্পী আসাদুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ভূঞা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আ. ফ. ম কাউসার এমরান, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী বাপ্পি, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বেলাল, মাছিহাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলামিনুল পাভেল, প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ প্রমুখ।
পরে ৩৬৫ জন শিশু শিল্পী কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে দলবেঁধে ছবি আঁকতে বসে। এ সময় তারা কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করে তাদের চিত্র কর্ম ফুঁটিয়ে তুলেন। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেয়ে তাদের রং-তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠে এক একটি চিত্র কর্ম। আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারী শিশু শিল্পীরা বলেন, আমরা বাসায় বা শ্রেণী কক্ষে বসে কল্পনার উপর নির্ভর করে ছবি আঁকতে হয়। কিন্তু প্রকৃতির কাছে এসে চিত্রাংকন করতে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। আমরা প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখে আমাদের ক্যানভাসে ফুঁটিয়ে তুলছি। তাছাড়া শহুরে জীবন যাপনের কারণে গ্রামীন জনজীবন সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা ছিলোনা। কিন্তু এই ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির পাশাপাশি গ্রামের জনজীবনের সাথেও পরিচিত হতে পেরেছি।
অভিভাবকরা জানান, ইট-পাথরের নগরে আর যান্ত্রিক জীবনে শিশুদের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। তাই শিশুদের মানবিক ও কোমল করে তুলতে শিশু নাট্যম প্রতি বছর আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে তা প্রশংসনীয়। এই ক্যাম্প শিশুদের ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি মেধা বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিশু নাট্যমের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদ নিয়াজ মোঃ খান বিটু বলেন, প্রতি বছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এই আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে শিশু নাট্যম। এ নিয়ে ৯ম বারের মত আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে এসে তাদেরকে মানবিক করে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, শিশু শিল্প চর্চার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ রুহুল আমীন বলেন, আমি মনে করি এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। প্রকৃতির মাঝখানে ছোট্ট ছোট্ট সোনামণিরা আট ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছে। এতে তারা মানবিক হবেন পাশাপাশি দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবেন। তাই সারাদেশেই এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে দেয়া উচিত।