এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নাসিরনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। সে মামলার সূত্র ধরে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে দাখিল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার দাখিল পরীক্ষার্থীর বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে। সে এরফানিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী একটি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার সময় প্রায় সময়ই উত্ত্যক্ত করত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিত ওই দাখিল পরীক্ষার্থী। তার সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক ধর্ষণের হুমকি দেয় সে।
পরে গত ৩০ আগস্ট রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার পর মুখে কাপড় বেঁধে পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সে চিত্র ভিডিও ধারণ করে। পরে সে ভিডিও দেখিয়ে আবারো ধর্ষণ করতে চাইলে ভুক্তভোগী রাজি না হওয়ায় দাখিল পরীক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে দেয়। মুহূর্তেই সে ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
পরে ওই ভুক্তভোগী আত্মহত্যা করতে চাইলে পরিবারের লোকজন দাখিল পরীক্ষার্থীর পরিবারকে অবগত করেন। স্থানীয়ভাবে সালিশ করে মেয়েটিকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় ধর্ষকের পরিবার। কিন্তু মেয়েটির পরিবার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হয়ে ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার চেয়ে নাসিরনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। পরে সে মামলার সূত্র ধরে দাখিল পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস হোসাইনের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কর্তৃক ধর্ষণের বিষয়ে জানতে কথা হলে তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি সঠিক না। এর বেশি আমি জানি না। এই বলে তিনি জেলা প্রশাসকের অফিসে কাজ আছে অজুহাত দেখিয়ে তিনি চলে যান।
মেয়েটির বাবা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে একজন শিক্ষার্থী। ওই দাখিল পরীক্ষার্থীর পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। থানায় মামলা করায় মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই। বিচার না পেলে আমি ও আমার মেয়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করব বলে তিনি হুমকি দেন।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। পরে মেয়েটির বাবা নাসিরনগর থানায় এসে মামলা করলে আমরা দাখিল পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করি।
ওই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার খবর শুনেছি। যেহেতু মামলা হয়েছে তাই বিষয়টি এখন আইনগতভাবেই দেখা হবে।