এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। ছেলেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতভাগা বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ মুছা (৮০) বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ছেলেদের নির্মমতার বর্ণনা দেন। উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আফজলেরপাড়া এলাকায় ওই বৃদ্ধের বাড়ি।
বৃদ্ধ মোহাম্মদ মুছা বলেন, পাঁচ পুত্র, দুই কন্যা ও এক স্ত্রী নিয়ে এক সময় সুখে কাটছিল জীবন। ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই হঠাৎ আমার স্ত্রী মজুমা খাতুন মারা যান। এর মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিই। আমার স্ত্রী মজুমা পৈতৃক সূত্রে কিছু জায়গা পায়। ওই সম্পত্তি ছাড়াও আমার নিজের দশ শতক বাড়িভিটাসহ চার কানি জায়গা ছিল। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার আগে আমার তৃতীয় ছেলে শহীদুল ইসলাম ও চতুর্থ ছেলে মাসুদ পারভেজ পরিবারের সবার অজান্তে সুকৌশলে আমার স্ত্রী মজুমার কাছ থেকে হেবা দলিলে কিছু জায়গা লিখে নেয়।
বিষয়টি পরে আমি জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে মারধর করে। আমার দুই ছেলের স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেয়। তাদের স্বামীরা তখন বিদেশে অবস্থান করছিল।
২০১৭ সালের শেষের দিকে আমাকে ঘরেবন্দি রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ছেলে শহীদুল ও পারভেজের সহযোগিতায় দ্বিতীয় ছেলে সিরাজুল ইসলাম বাড়িভিটাসহ কিছু সম্পত্তি হেবা দলিলে লিখে নেয়। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় অন্য ছেলে শহীদুল ইসলাম জোর করে আরও কিছু সম্পত্তি লিখে নেয়। আমি বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য লোক ও প্রশাসনকে জানালে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
তাদের ভয়ে অবশেষে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। বর্তমানে আমি মরিয়মনগর ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দবাড়ি আমার বড় ও পঞ্চম ছেলের ভাড়া বাসায় আছি। প্রায় ৪ বছর ঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকার পরও তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা আমাকে ঘায়েল করতে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অপবাদ ও অভিযোগ করছে। সম্পত্তির জন্য ছেলেরা এমন নির্মম হতে পারে ভাবতেই পারছি না।
তারা আমার স্ত্রী ও আমার সম্পত্তি জোর করে লিখে নিয়ে শুধু অন্যায় করেনি বরং আমার অন্য দুই ছেলেকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। ২০১৩ সালে জায়গার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আমাকে মারধর করলে আমি থানায় মামলা করার পর আমার ছেলে শহীদুল ও পারভেজকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যায়। শেষ বয়সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে তাদের বিচার দাবি করছি। দৃষ্টান্তমূলক এমন বিচার কামনা করছি; যাতে অন্য কোনো বাবা আমার মতো ছেলের নির্মমতার শিকার না হয়।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, যেহেতু বাবার বিরুদ্ধে ছেলেরও অভিযোগ রয়েছে। দুইপক্ষকে বসিয়ে কথা বলতে চাইলাম; কিন্তু একপক্ষ আসলেও আরেকপক্ষ আসে না। তাই বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হবে। বাবা-ছেলের সমস্যাটি সমাধানে চেষ্টা করা হবে।