প্রশ্ন: জাহান্নামে নারীর সংখ্যা বেশি। নারীদের এমন কি আমল করা উচিৎ যাতে তারা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে?
উত্তর: নি:সন্দেহে মুমিন জীবনের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা হল, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া এবং জান্নাতে প্রবেশ করা। কেউ যদি জাহান্নাম থেকে রক্ষা পায় আর জান্নাতে প্রবেশ করে তাহলে এর চেয়ে বড় সফলতা আর কিছু নাই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ
“তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফল।” (আলে ইমরান: ১৮৫)
তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই জাহান্নাম থেকে বাঁচা এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা জরুরি। কিন্তু হাদিসের আলোকে দেখা যায়, মহিলাদের জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথকে যেমন সহজ করা হয়েছে ঠিক তেমনি তারা যদি এ সহজ আমলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে তাহলে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তাই তো মিরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামকে দেখানো হয়েছে, জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশাই নারীদের মধ্য থেকে। সুতরাং মহিলাদের কতর্ব্য, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সহজে জান্নাতে যাওয়ার যে দিক নির্দেশনাগুলো প্রদান করেছেন সেগুলোর প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া এবং পাশাপাশি জাহান্নাম থেকে বাঁচার পথ অনুসন্ধান করা।
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুমিন-মুসলিমকে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
নিম্নে মহিলাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য নির্বাচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হল:
✪ জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশ নারী হওয়ার কারণ:
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أُرِيتُ النَّارَ فَإِذَا أَكْثَرُ أَهْلِهَا النِّسَاءُ يَكْفُرْنَ قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ
“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ অধিবাসী নারী। আর এটা এই কারণে যে তারা অস্বীকার করে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহকে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, তারা তাদের স্বামীদের স্বামীদের অবদান অস্বীকার করে। তাদের অবস্থাটা এমন যে, তুমি সারা জীবন তাদের প্রতি দয়াসূলভ আচরণ করে যাচ্ছ আর তোমার কোন একটি ত্রুটির কারণে তোমাকে বলবে:, তোমার মাঝে আমি কখনোই ভালো কিছু পাইনি।” (সহিহ বুখারি)
✪ মহিলাদের জান্নাতে যাওয়ার চারটি সহজ আমল:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জান্নাত লাভের জন্য চারটি সহজ আমলের কথা বলেছেন। তা হল:
إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا ، وَصَامَتْ شَهْرَهَا ، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا ، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ . ورواه ابن حبان في صحيحه عن أبي هريرة رضي الله عنه، والحديث صححه الألباني في الجامع الصغير.
১.”যখন কোন একজন নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে।
২. রমাদানের সিয়াম পালন করবে।
৩. নিজের সতীত্বের হিফাজত করবে।
৪. এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে চাও তুমি প্রবেশ কর।” (ইবনে মাজাহ। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামীদেরকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে নারীদের সতর্ক করেছেন। যেমন:
মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“لَا تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ: لَا تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللهُ؛ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا– أخرجه الترمذي و صححه الألباني –
“কোন নারী তার স্বামীকে যখনই এই দুনিয়ায় কষ্ট দেয় তখন জান্নাতের হুরে ঈন তথা ডাগর চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী হুরদের মধ্য থেকে তার স্ত্রী বলে, “তাকে কষ্ট দিও না-আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন! সে তো তোমার কাছে একজন আগন্তুক মাত্র। অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের মাঝে চলে আসবে।” (তিরমিজি, নাসিরুদ্দিন আলাবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন)
এ ছাড়াও বহু হাদিসে স্বামীর আনুগত্য করা, তাকে সন্তুষ্ট রাখাকে নারীর জান্নাতে যাওয়ার কারণ বলা হয়েছে।
যাহোক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কর্তব্য, কুরআন-হাদিসে জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য যত ধরণের আমল রয়েছে সেগুলো যথাসম্ভব বেশি করে সম্পাদন করা।
নিম্নে নারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় আমল তুলে ধরা হল:
১). যথাসময়ে একান্ত ভয়-ভীতি ও বিনয়-নম্রতা সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।
২) ফরজ সালাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের নফল সালাত আদায় করা। যেমন: তাহাজ্জুদ, সালাতুল ইশরাক, সালাতুয যোহা (চাশত/আওয়াবিন), তাহিয়াতুল ওযু ইত্যাদি।
৩) রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করা।
৪) যথাসাধ্য নফল রোজা রাখা। যেমন: প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, আইয়ামে বীয তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অথবা মাসের যে কোনও সময় তিনটি রোযা, আরাফা, আশুরা ইত্যাদি।
৫) যাকাত ফরজ হলে যাকাত দেওয়ার পাশাপাশি যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে নফল দান-সদকা করা। (হাদিসে নারীদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য দান-সদকা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।)
৬) হজ্জ ফরজ হলে তা আদায় করা এবং যথাসম্ভব উমরা আদায় করা।
৭) কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনের তরজমা ও তাফসির পাঠ করা, হাদিস পাঠ করা এবং ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা।
৮) তওবা-ইস্তিগফার ও দুআ, জিকির, তাসবিহ ইত্যাদি পাঠ করার মাধ্যমে সদাসর্বদা জিহ্বা তরতাজা রাখা
৯) সব ধরণের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষ করে গিবত, চোগলখোরি, পরনিন্দা, মিথ্যা সাক্ষ্য, অশ্লীল কথা, মানুষকে গালাগালি, অভিশাপ দেয়া, বিভিন্ন প্রকার গোপন পাপ ইত্যাদি।
লেখক – শহিদুল ইসলাম সেলিম।