সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি ও গবেষক জয়দুল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নন্দিতা গুহ, তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ এর সম্পাদক সাংবাদিক ও বাচিকশিল্পী মোঃ মনির হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগারের সভাপতি কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন। অনুষ্ঠানটি স ালনা করেন কবির কলম সভাপতি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ।লেখক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতনকান্তি দত্ত, রম্য লেখক পরিমল ভৌমিক, ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্রের সভাপতি ওসমান গনি সজীব, নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহিদুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার, সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক একেএম শিবলী, জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার, জেলা পাবলিক লাইব্রেরির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল আলম বাবু, কবি ও কথাসাহিত্যিক মানিক রতন শর্মা, সংস্কৃতি কর্মী ও সাংবাদিক ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ, প্ল্যাটফর্ম সম্পাদক কবি হেলাল উদ্দিন হৃদয়, সংস্কৃতিকর্মী নেলী আক্তার, কবি ও গীতিকার মোঃ আব্দুর রহিম, কবি এম এ হানিফ, আবরণীর নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান পারভেজ, নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর সভাপতি শামীম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খালেদা মুন্নি, চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. পুতুল বেগম, সংগীতশিল্পী হৃদয় কামাল, সংগীত শিল্পী সোহাগ রায়, কবির কলমের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, কবি মেহেদী হাসান প্রমুখ।
এছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী আজম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মী ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সামাজ মানেই সংস্কৃতি। সমাজ যেহেতু আছে কাজেই সেখানে সংস্কৃতিও আছে। তাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই সংস্কৃতিসেবী হতে হবে। সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। সংস্কৃতি চর্চা করলেই আমরা মুক্তবুদ্ধির মানুষ পাবো, আমরা চিন্তা, মননে উন্নত মানুষ পাবো। আর রাজনীতি হলো সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার একটি মাধ্যম। সমাজকে প্রগতির দিকে, সমাজকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়ার বড় মাধ্যমটি হলো রাজনীতি, বড় হাতিয়ার হলো রাজনীতি। তাই রাজনীতি কিন্তু সংস্কৃতিবিহীন হতে পারে না। যে রাজনীতি সুস্থ রাজনীতি, যে রাজনীতি উন্নয়নের কথা বলে, মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করে, সেই রাজনীতি অবশ্যই সংস্কৃতির সাথে যুক্ত এবং সংস্কৃতিকে নিয়েই তার পথচলা। সেই জন্যই একজন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সংস্কৃতিপ্রেমী, তিনি সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন, চর্চা করেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, আপনারা লেখক ও সংস্কৃতিসেবীগণ হলেন সুশীল সমাজের অন্যতম অংশ। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে এসে আমার আজকের অনুভূতি আপনাদের সবার চাইতে একটু ব্যতিক্রম। কেননা আপনারা যাকে ঘিরে এই আয়োজন করেছেন, তিনি আমার অত্যন্ত কাছের একজন। আজ সারাদিনই তাঁকে নিয়ে যেসব সংগঠন নানান আয়োজন করেছেন, তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন, তারা সকলেই ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা। আপনাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি আমার কাছে অত্যন্ত ভালো লাগছে। তিনি সবাইকে সুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা করে বাংলাদেশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে এগিয়ে নেওয়ার উদাত্ত আহŸান জানান।
অনুষ্ঠানের অনুভূতি প্রকাশ করে জননেতা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রয়াত গুণীজনদের নাম উচ্চারণ করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক উজ্জ্বল, অনেক আলোকিত। অনেক জ্ঞানী-গুণী বিশ্বখ্যাত মানুষের জন্ম হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য; এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেশ কয়েকবার সা¤প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে। এমনকি আজকে যেই মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটাও কয়েক বছরের ব্যবধানে দুবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি; নাকি পিছিয়ে যাচ্ছি ? নানান প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হারানো ঐতিহ্য নৌকাবাইচ, পুতুলনাচ ও নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ শুরু করেছিলাম।
তিনি বলে বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমি আপষকামী লোক, কারো সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হতে চাই না। তবে নীতি, আদর্শ ও অগ্রগামিতার ব্যাপারে আমি আপোষহীন। নানান অসঙ্গতি দূর করার মানস নিয়েই আমি একদিন রাজনীতিতে এসেছিলাম। আমি একেবারেই ব্যর্থ হয়েছি তা বলবো না, কেননা আমি চেষ্টা করেছি। আমাদের সকলের এই চেষ্টা অব্যহত থাকলে যেসব জায়গায় আমরা সক্ষম হবে না, তা আমাদের উত্তরসূরীরা পূরণ করতে পারবে। এই ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেহেতু আমার জন্মভূমি, তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। একসময় আমি বাংলাদেশ নিয়ে, মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় রকমের চিন্তা করতাম, কিন্তু বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়াই আমার বাংলাদেশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াই আমার মানবজাতি। এর কল্যাণয় চিন্তায় আমি আমার বর্তমান সময় পার করছি। আমার সাথে অনেকেই রয়েছেন, কি পেলাম, না পেলাম এই হিসেব করে অনেকেই ছিটকে পড়েছেন। এসব হিসেব করে রাজনীতি করা যায় না। রাজনীতিতে আদর্শ ঠিক রেখে, সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দেশের উন্নতির কথা চিন্তা করে সবাইকে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো নাগরিক হতে হবে। শহরটাকে কিভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা যায় সবাই মিলে সেই চিন্তা করতে হবে। এসব চিন্তা করেই আমি একদিন রাজনীতিতে এসেছিলাম। আমার সফলতা-ব্যর্থতা কি” আমি জানি না। এসব আমি পরে চিন্তা করি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ মানুষের আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, সাধারণ মানুষের অনেক দোয়া ও আশীর্বাদ পেয়েছি। এটা আমি স্বীকার করব। এই ভালোবাসার কারণেই আমার নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এবারের জন্মদিনের নানান অনুষ্ঠানে গিয়েছি। আগামী দিনগুলিতে আমি আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানুষের ভালোবাসাই আমার জীবনে চলার পথের পাথেয়।
অনুষ্ঠানে বক্তাগণ মাননীয় এমপি মহোদয়ের দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন। পরে অতিথিবৃন্দ, সকল লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গদের সঙ্গে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন। এসময় সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।