নিউজ ডেস্ক : রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে না- যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তারা যা বলছে, তা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা উচিত, তারা যা বলছে তা সত্যি সত্যি ঘটেছে কিনা।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মানবাধিকার দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
আনিসুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করতে নয়, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও সহিংসতা বন্ধ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করা মানবাধিকার নয়।
তাহলে রাস্তা বন্ধ করে বিএনপি সমাবেশ করতে চেয়েছিল বলেই কি দলটির নেতাদের গ্রেফতার, যানবাহন বন্ধসহ বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সমাবেশ তারা এখনো করছেন। সেটা বাধা দেওয়ার কথা নয়। কথা হচ্ছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা, সহিংসতা করা- এসব বন্ধ করার জন্য। আপনারা দেখেছেন, বিএনপির অফিসে কী জিনিস ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বোমা থাকা কতটা ন্যায়সঙ্গত, সেটা আপনারা বিচার করবেন।
এর আগে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা ও উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠছে, সেখানেই সরকার ত্বরিত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। বাংলাদেশে যারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে তাদেরই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় সরকারের অনেক বড় বড় অর্জন সত্ত্বেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ কেউ মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের কোথাও অন্যের অধিকার হরণ করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা নেই। বরং শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকারের কথা বলা আছে। কোথাও বলা নেই জনসাধারণের চলাচলের পথ রুন্ধ করে সভা-সমাবেশ করা যাবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা জানার আগেই আজকাল অনেকে আমাদের মানবাধিকার সম্পর্কে সবক দিচ্ছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটলেও তারা টুঁ শব্দও করেননি।
তিনি বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করে এর অধীনে শক্তিশালী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় বর্তমানে এই কমিশনের এখতিয়ার ও কাজের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। দেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করছে। মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায় ও আদেশ দ্রুত কার্যকর করার যথাযথ পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে সরকার আরও অনেক আইন প্রণয়ন করেছে। বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের বিষয়টিও এখন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন রয়েছে।
মানবাধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ চারবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির প্রমুখ।