কুমিল্লার চান্দিনায় প্রতিপক্ষ ভাতিজাদের মামলায় ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যা করেন সোলেমান ব্যাপারী (৪৫)। শুধু তাই নয়, মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ কোপান তিনি। এর আগে নিজে রান্না করে বাবা সোলেমানের প্লেটে খাবার তুলে দেয় মেয়ে সালমা (১৪)।
হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ঘাতক পিতা। বুধবার রাতে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের মেয়েকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী চান্দিনা থানার এসআই সুজন দত্ত। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা খুনি সোলেমান ব্যাপারী বক্তব্য শুনেছেন আদালত। এ সময় নিজের মেয়েকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি।
চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের সোলেমান ব্যাপারী তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ৭ শতাংশ জমি নিয়ে তার আপন ভাতিজা শাহজালাল ও শাহ কামালের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। ওই সম্পত্তি বিরোধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। ঘটনার পর তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি শেষে থানায় মামলা করেন সোলেমান। সেই মামলায় পুলিশ ৩২৬ ধারা যুক্ত না করায় মাথা গরম হয়ে যায় সোলেমানের। প্রথমে নিজের মাথা ফাটিয়ে ৩২৬ ধারা যুক্ত করে মামলা করবেন। কিন্তু কুচক্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে তা থেকে সরে নিজের মেয়েকেই খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি।
দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার সোলেমান ব্যাপারীর। দুই ছেলে ইউসুফ ও ইউনুছ ঢাকার একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সুবাদে দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস তার। ২৫ অক্টোবর মারামারির ঘটনায় স্ত্রী হাসপাতালে থাকায় বড় মেয়ে এলমাও মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে ছিলেন। বাবাকে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে ছিল ছোট মেয়ে সালমা (১৪)।
১ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে স্ত্রী ও বড় মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ি (সোলেমানের শ্বশুরবাড়ি) পৌঁছে দিয়ে সন্ধ্যায় ফিরেন বাড়িতে। সন্ধ্যার পর মেয়ে সালমা আক্তার নিজের হাতের রান্না পিতার খাবার প্লেটে তুলে দেন। দুইজনে খাবার শেষে মেয়েকে ঘুমাতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান সোলেমান।
সেই রাতেই তার উকিল শ্বশুর আব্দুর রহমানের ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করে গভীর রাতে বাড়িতে এসে মেয়েকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ঘর থেকে বের করে ভাতিজাদের ঘরের পেছনে নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়।
ঘটনার নাটক সাজাতে নিজের ঘরের টিনের বেড়া খুলে ও দরজা খুলে রেখে রাতেই ফের আব্দুর রহমানের বাড়িতে চলে যান সোলেমান।
পরদিন ভাতিজাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান ব্যাপারী। ওই মামলার পর থেকে এলাকা ছাড়া মামলার আসামিরা। তারপরও যখন পুলিশ বিভিন্ন ভাবে সোলেমানকে সন্দেহ করছিল তখন গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর নিখোঁজের নাটক সাজান সোলেমান।
সারারাত নিখোঁজ থেকে নিজের গলার উপরের চামড়া ব্লেড দিয়ে নিজেই কেটে ভোরে বাড়ি সংলগ্ন একটি বাগানে অচেতনের ভাব দেখিয়ে পড়ে থাকেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
পুলিশ গত ৬ অক্টোবর সোলেমান ব্যাপারীর উকিল শ্বশুর আব্দুর রহমান ও বন্ধু খলিলকে আটক করলে কিশোরী সালমা হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে গত ৭ অক্টোবর পিতা কর্তৃক সন্তান হত্যার চাঞ্চল্যকর ওই রহস্য পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ।
ওই ঘটনায় চান্দিনা থানার এসআই সুজন দত্ত বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোলেমান ব্যাপারী, তার দুই ভাই আব্দুল বাতেন (৫২), লোকমান হোসেনসহ (৩৫) সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।