নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোলমান সিকান্দারের বিরুদ্ধে একই পরিষদের এক নারী সদস্যকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। স্বাক্ষর আনতে গেলে ওই নারী ইউপি সদস্যকে চেয়ারম্যান ধর্ষণ করেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনা মৌখিক অভিযোগের পর ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। এর আগেই ওই নারী ইউপি সদস্যকে তার স্বামী তালাক দিয়েছেন। পরে ওই নারী চেয়ারম্যানকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রথমে সে রাজি হলেও পরে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় টক অব দ্য উপজেলায় পরিণত হয়েছে নারী মেম্বারের ধর্ষণের ঘটনাটি।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ মে জোহরের নামাজের পরে একটি জন্মনিবন্ধনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় চেয়ারম্যান তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পরে তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সোলমান সিকান্দার তাকে বাসায় যেতে বলেন। পরে ভুক্তভোগী ওই নারী ইউপি সদস্য স্বাক্ষরের জন্য তার বাসায় যান। সেখানে চেয়ারম্যান সোলমান সিকান্দার একাই ছিলেন।
এ সময় ওই নারী বাসায় ঢুকলে চেয়ারম্যান তার বাসায় দরজা বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে জোর করে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন চেয়ারম্যান সোলমান সিকান্দার। পরে ওই নারী এ ঘটনা প্রকাশ করে দিতে চাইলে সোলমান সিকান্দার তাৎক্ষণিকভাবে তার কাছে মাফ চান এবং ওই নারীকে বিয়ে করবেন বলে জানান। পরে ওই নারী চলে গেলে চেয়ারম্যান পরে তার কথা পালটে ফেলেন। তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবারের সদস্য ও তার স্বামী ঘটনাটি জেনে ফেলেন। ২৫ মে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী তাকে তালাক দেন। পরে নিরুপায় হয়ে ওই নারী আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. ছফিউল্লাহ মিয়ার কাছে এ ঘটনার বিচার চান এবং বিয়ের দাবি করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
২৯ মে বিকালে হাজী ছফিউল্লাহ মিয়ার অফিসে এ বিষয় নিয়ে আপস মীমাংসার জন্য বসলে তা সমাধান না করে সবাই চলে যান। ওই রাতেই তালশহর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের মেম্বারের বাড়িতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়, তালশহর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ মেম্বার, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. সোলমান সিকান্দার ও ভুক্তভোগী ওই নারী উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতেই ছয় লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি জোরপূর্বক আপস মীমাংসা করা হয়।
এ ঘটনার পর বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীর মোবাইলে ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ফোন ব্যাক করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি অসুস্থ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর তিনি ফোন বন্ধ করে ফেলেন।
এ বিষয়ে অপর নারী সদস্য সাবিনা মেম্বারের মোবাইল কল করলে তার স্বামী নূরুল আমিন সরকার মোবাইল রিসিভ করে বলেন, রাতে ভুক্তভোগী ওই নারী আমাদের বাসায় আসছিলেন। সবাই বসে চা খেয়ে কথা বলেছেন। তবে টাকা দিয়ে সমাধান করার বিষয়টি আমার জানা নাই।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
তবে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারম্যান কর্তৃক নারী ইউপি সদস্যকে ধর্ষণ একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের প্রতি আহবান থাকবে ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
তালশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলমান সিকান্দার বলেন, ইউনিয়নের বরাদ্দ নিয়ে মেম্বারদের সঙ্গে অনেক সময় ঝামেলা হয়। কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এসব তথ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।