করোনা কিংবা কোনো যুদ্ধের অজুহাতে পণ্যের মূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ালে, সংকট না থাকলেও সংকট সৃষ্টি করলে- সেই অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আলম, নারী সাংবাদিক কেন্দ্র সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা গত কয়েকদিন ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলছেন। করোনা এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে সরকার পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে এবং একইসঙ্গে যে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সুযোগ নিয়ে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কারণ কোনো দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া কোনো সৎ ব্যবসায়ীর কাজ নয়।’
‘আজকের দিনে কেউ যদি কাউকে বাসি ভাত দেয়, তাহলে সেই ভাত তার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারার সম্ভাবনা আছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবরা বলছেন- দেশে নাকি নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে, এটি তিনি কোথায় অনুসন্ধান করে পেলেন, সেটা আমার প্রশ্ন। আজকে বাংলাদেশে কোনো মানুষ না খেয়ে থাকে না। সন্ধ্যার পরে কিংবা ভর দুপুরে ঢাকা বা অন্য শহরের অলিতে গলিতে কিংবা গ্রাম-গ্রামান্তরে ‘মা আমাকে একটু বাসি ভাত দাও’ ডাক শোনা যায় না। কারণ বাসি ভাতের সমস্যা আমাদের নেই। কাউকে এক মুষ্ঠি চাল ভিক্ষা দেবেন, সেই দিনও চলে গেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে কোনো মানুষ না খেয়ে নেই।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সমস্ত মানুষ আগের তুলনায় ভালো আছে বরং মির্জা ফখরুল সাহেবরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন সারের দাবিতে যখন মানুষ বিক্ষোভ করেছে, তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে, কৃষকের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে, মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। শুধু যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের উন্নয়ন হয়েছে। আজকে প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬শ ডলার আর এখন প্রায় ২ হাজার ৬শ ডলার। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় গত ১৩ বছরে সাড়ে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩ বছর আগে একজন শ্রমিক সারাদিন কাজ করে তিন-চার কেজি মোটা চাল কিনতে পারতেন, এখন একজন শ্রমিক সারাদিন কাজ করে সেই চাল ১২ থেকে ২০ কেজি কিনতে পারেন। অর্থাৎ আগের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি চাল কিনতে পারে। তাই মির্জা ফখরুল সাহেবদের বলব যে, এই ধরনের বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে আপনারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য আর তারেক জিয়ার শাস্তির মধ্যে আটকে থাকা থেকে আপনাদের রাজনীতিটাকে মুক্ত করুন।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে কয়েক দশকে যেভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে এটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য সত্যিই একটি উদাহরণ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নারী হবেন এটি আগে কেউ ভাবেনি। সংবাদপত্রের পাশাপাশি টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনে বহু নারী এখন কর্মরত। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, দেশের অগ্রগতির জন্য নারী অগ্রগতি আবশ্যক। সে কারণে তার নেতৃত্বে নারীর উন্নয়ন ও প্রগতির সুফল পাচ্ছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন, যদি আগের সরকারপ্রধানরা একইভাবে কাজ করতেন, তাহলে বাংলাদেশের নারীরা আরও এগিয়ে যেতে পারত।
প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম নারী সহ-সভাপতি মাহফুজা খানমকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।