তিতাসকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে পারে পর্যটন শহর -ড. মাতিন আহমেদ

জনতার কন্ঠ, 1 December 2022, 377 বার পড়া হয়েছে,

স্বপ্ন মানুষের বেঁচে থাকার শক্তি। যার স্বপ্ন নেই সে প্রায় অর্ধমৃত মানুষ। তাই এই স্বপ্ন পূরণের নেশায় ঘুম ভেঙ্গেই কাজে বের হতে হয় । সকাল থেকে রাত্র পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়। কাজই মানুষকে অমরত্ব দেয়; প্রাণী হিসেবে মানুষের জন্মগতভাবে অমরত্ব লাভ করার কোনোই সুযোগ নেই। হ্যাঁ, স্বপ্ন দেখতে হবেই; ছোট হোক আর বড় হোক। ছোট স্বপ্ন দেখলে অমরত্বের স্থায়ীত্ব কম হবে, এটাই ভেরি ন্যাচারেল। তাই ড্রিম বিগ; সার্ভাইভ বিগ।

আমি স্বপ্নবাজ মানুষ; হাঁটি আর স্বপ্ন বানাই। তারপর তা বাস্তবায়নে উন্মাদনায় মেতে উঠি। একজন সামাজিক উদ্যোক্তা (সোস্যাল অন্ট্রাপ্রেনর) সমাজের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলের জন্য পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে। হয়তো এই প্রেরণা থেকেই আমি আমার মতো করে শত বাঁধা অতিক্রম করে করেই কাজ করে যাচ্ছি এখনও। “যদি বেঙ্গালুরু কম্পিউটার সিটি হতে পারে ; তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন স্টুডেন্টস্ ইংলিশ স্পিকিং টাউন হতে পারবে না” এই স্লোগানকে সামনে রেখে গত ২৫ বছরে ২৩ হাজারের অধিক ইংরেজি বক্তা তৈরির উদ্যোক্তা হিসেবে আমি ভবিষ্যৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী এবং দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ছাত্র-ছাত্রীরাই আমার কাজ করার প্রেরণা আর তাই “আগেতো মানুষ হওয়া চাই ; তারপর সবই হওয়া যায়” এই সামাজিক আন্দোলনে সকলকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানেই দীর্ঘদিন ধরে মেধাবী চাষের চারণভূমি। এখান থেকেই গড়ে উঠেছেন মহারথীর অনেকেই। প্রশ্ন হলো, বিশ্ববরেণ্য বহুজ্ঞানী গুণী বিদ্বজ্জন কতোজনকে আমরা মনে রাখতে পেরেছি; আর কতোজনই মনে রাখার মতো এই জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিছু করে দিয়ে গেছেন। একটি প্রজন্ম শেষ হলেই আবার নতুন করে সেই জায়গায় কেউ যেতে পারছে না, কিন্তু কেনো? এক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনের সংখ্যাই বেশি ছিলো। এখন হাতে গুণা কয়েকজন হবে। এখানে অনেক কিছু ভাববার আছে। আমাদের জেলার ইতিহাসের পাতা ভারি হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন শুধু নেগেটিভ থট গুলো নিয়ে। অনেকেই আবার আঙুল তুলে আমাদের কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেনো; আর কতো দিন! এখানে এতোগুলো মেধাবী আর সফল মানুষ থাকতে। আমাদের প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে, আমরা কী দূর থেকে বসে বসে শুধু দেখে যাবো আর আক্ষেপ করে সময় নষ্ট করবো!

না, এটা আর হতে দেওয়া যায় না। আমরা সকলে মিলে আমাদের ছোট্ট এই শহরটি নিয়ে ভাবতে পারি। ভাবতে পারি শহরের পরিধি নিয়ে। আমাদের গর্বের তিতাস যার পূর্বদিকে সুন্দর লইস্কা বিল এবং তিতাসের আরো একটি শাখা নিয়েই তো আমরা অনেক কিছু ভাবতে পারি। শিক্ষা বিষয়ক একজন সামাজিক উদ্যোগক্তা হিসেবে আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি। দেখেছি তারা একটি নদী নিয়ে এটিকে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে দু’পাশে সুন্দর সুন্দর শহর ও পার্ক বা নৌবহরের মতো আকর্ষণীয় অনেক কিছু করে ফেলে। প্রয়োজনে অনেক দেশে কৃত্রিম নদী বা লেক বানিয়ে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করছে। আর আমার দুঃখী হতভাগী এই সুন্দরী তিতাসের ললাটে আমরা ভালোবাসার কোনো চিহ্নই এঁকে দিয়ে যেতে পারছি না। না পারলাম তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ বা কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট উপহার দিয়ে মাতৃভূমির দায় মুক্তি করতে। মাঝে মাঝে ভাবি প্রজন্ম যদি কোনোদিন জেগে ওঠে মেধাবী সম্ভাবনাময় এই মানুষগুলোর কাছে এই দায় মুক্তি না হওয়ার কারণ জানতে চায়। আমরা কী উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি? আমার অনুরোধ আসুন সবাই মিলে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মধন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুকে আরো কিছু করার রূপরেখা আজই তৈরি করি। তিতাসের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার জন্য, এখন থেকেই কাজ শুরু করি। আমার মনে হচ্ছে মহান আল্লাহপাক আমাদের বোধহয় এমনই কিছু বৈপ্লবিক কাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ করে ডেকে এনেছেন। লেটস গেট স্টার্টিড নাও। ভালো থাকবেন।

–ড. মোঃ মাতিন আহমেদ