হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের নারী শ্রমিক অনিতা মুড়া। বাগানের ভেতর উত্তরপাড়ায় ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তার উপার্জনের টাকাতেই চলে সংসারের সব সদস্যের ভরণপোষণ।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে বাগানে ধর্মঘট শুরুর পর থেকেই রোজগার বন্ধ আছে অনিতা মুড়ার। জমানো টাকা দিয়ে কয়েকদিন কোনোমতে চলেছেন। এখন হাতে টাকা পয়সা নেই। তাই বাজার থেকে সদাইপাতি কেনা দূরের কথা চুলায় একবার আগুন দিলেও দ্বিতীয়বার আগুন জ্বালানোর কথা চিন্তাও করতে পারছেন না তিনি। আর তাই রঙ চা আর রুটি খেয়েই কোনো মতে পরিবার নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন এই নারী শ্রমিক।
অনিতা মুড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের অবস্থা খুবই নাজুক। একঘরে সব সদস্যদের নিয়ে কোনো মতে থাকেন তিনি। অনিতা মুড়ার দাবি, শত কষ্ট সহ্য করে শ্রমিকদের স্বার্থে এবং একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য খেয়ে না খেয়ে হলেও ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন।
অনিতা মুড়ার মতো চুনারুঘাটের শতশত নারী ও পুরুষ চা শ্রমিকদের ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দিলেও তাদের সবাই ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চলমান ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন।
উত্তরপাড়ার বাসিন্দা চা শ্রমিক শুকনতলা মাল বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে ধর্মঘটে আছি। শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই। ৩০০ টাকা দিতে হবে, না হলে কাজে যোগ দিব না। টানা ধর্মঘটে ঘরে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। কেউ খাবার নিয়ে আসছে না। তাতে কি রঙ চা আর রুটি আছে না?
উত্তরপাড়ার অন্য মুড়া নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ঘরে চাল নেই। হাতে টাকা নেই। রঙ চা ও রুটি খেতে হচ্ছে। তারপরও দাবি আদায়ে মাঠে আছি। কষ্ট হচ্ছে তারপরও আন্দোলন করছি।
বাগানের রায়পাড়ার বাসিন্দা গৌরি কর্মকার বলেন, শুধু অনিতা মুড়া নয়, সব শ্রমিকের ঘরে খাবার সংকট দেখা রয়েছে। কেউ এগিয়ে আসছেন না। আমরা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি। কষ্ট হচ্ছে, তবে ধর্মঘট চলবে। এ ব্যাপারে আপোষ নেই। ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি দিতে হবে।
নতুন টিলার আলক মনি মুণ্ডা বলেন, ঘরে খাবার নেই। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কিভাবে চলবো বুঝতে পারছি না। দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। এতে আমরা কাজে ফিরতে পারবো। রোজগার দিয়ে নিত্যপণ্য কিনে খেতে পারবো।
বাসিন্দা অলকা ভৌমিজ নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম কয়েকগুণে বেড়েছে। ১২০ টাকায় হচ্ছে না। তাই ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করছি।
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, শ্রমিকদের ১২০ টাকায় চলছে না। দ্রুত যেন তাদের মজুরি ৩০০ টাকা করা হয়। বর্তমানে শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে আছেন।