লিটন মিয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে হাসপাতালের বেডে। ভয়ে নিকটজনরা কাছে যাচ্ছেন না। নিকট আত্মীয়দের কেউ একজন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর কাপড়ের আঁচল দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর চোখ মুছছেন। ডিউটি ডাক্তার কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পাচারি করছেন। সহকর্মীদের কেউ কেউ মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। বেশির ভাগই হাসপাতালের নীচ তলায় কিছটা সময় অপেক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাসপাতালের ২য় তালায় লিটন মিয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে। এক সময় যাদের সাথে অনেক কাজের সঙ্গী ছিলেন আজ তারা লিটন মিয়ার নিথর দেহ ধরে দেখতেও ভয়ে জড়সড়। লিটন মিয়া কি অচ্ছুৎ! তিনিতো জীবদশায় দশজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটাই জীবনবোধ। এটাই ভালোবাসার রকমফের। জীবনের মায়ায় অনেকে দোতালায় গিয়ে ধরে দেখতে যাননি! এটাই জীবন! কত অদ্ভূত মানুষের জীবন!! কত অদ্ভূত মানুষের ভালোবাসা!! জীবন চলে জীবনের নিয়মে কারো বেঁধে দেয়া নিয়মে নয়।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে চলে গেলেন শাহরাস্তির শ্রমিক লীগের নেতা লিটন মিয়া। চলে যাওয়ার কি-বা এমন বয়স হয়েছে তার? মাত্র জীবনের শুরু করেছেন লিটন ! কিন্তু পরিবার তথা বন্ধুদের কাঁদিয়ে অকালেই আতিমারী করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে চলে গেলেন তিনি। এতে কে ক্ষতির মুখে পড়েছে? নিশ্চয়ই পরিবার! অন্যরা ক্ষতির মুখে পড়ে নি আমরা এমন কথা বলবো না কিন্তু চাইলে পরিবারের এই ক্ষতি কোনভাবে পুষিয়ে নেয়া কি আদৌ সম্ভব? অতিমারী করোনা ভাইরাস নিয়ে যারা উপহাস করেন তারা নিজেরা সতর্ক হোন পরিবার ও বন্ধুদের বাঁচন। করোনাকে অবহেলা করবেন না। কারণ এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ তা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার জানেন। আমরা সকল বন্ধু ও শুভার্থীদের মঙ্গল কামনা করি। আমরা আশা করি, বিষয়টির প্রতি সকল অংশীজন গুরুত্ব দিয়ে নিজে বাঁচার জন্য চেষ্টা করবেন এবং পরিবার তথা বন্ধুদের বাঁচাতে সহায়তা করবেন। কোন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অকালে করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সেই পরিবার পথে বসা ছাড়া গতান্তর নাই। তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে অবহেলা ও গোঁয়াতোমি না করে নিজে বাঁচুন পরিবারকে বাঁচান সমাজ ও দেশের মানুষকে বাঁচতে অবদান রাখুন। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি জীবন মহা মূল্যবান। মৃত্যুস্বাধ সবাইকে একদিন গ্রহন করতে হবে। এ থেকে কারোই রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। সতর্ক থাকলে অকালে প্রাণ হারাতে হবে না। এতে নিজের জীবন রক্ষা পাবে পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে। তাই আসুন আমরা সবাই মাক্স পরি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালন করি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনাগুলো মেনে চলি। অতিমারী করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হাত থেকে নিজে বাঁচি পরিবারকে বাঁচাই এবং দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে অবদান রাখি। আমরা সকলে মিলে একটি সুখি ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিয়ে যাই। আমরা কেউই অনন্তকাল বেঁচে থাকতে আসিনি আর চাইলেও পারবো না। কিন্তু চাইলে অকালে প্রাণ হারানো থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো। তাই করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হাত থেকে নিজে বাঁচি পরিবারকে বাঁচাই এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে অবদান রাখি। আমরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করি কি করা উচিৎ আমার? আমরা আরো কি করতে পারি?
মোঃ রুহুল আমিন, সাংবাদিক, শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী।