মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকন্ঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে লোভী ও প্রতারকচক্রের দায়ের করা মিথ্যা মামলা খারিজ করে বিবাদীদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুরের ওই বীরমুক্তিযোদ্ধা সমাজে অপমান, হয়রানি ও নাজেহাল থেকে মুক্ত হলেন। অন্যদিকে এক লোভী পিতার নিজের কন্যাকে বিয়ে দিয়ে কিছুদিন পর সংসার ভাঙ্গিয়ে ছেলে পক্ষকে মামলা ও শালিসের নামে জেরবার করার বিষয়টিও সমাজের সামনে উন্মোচিত হলো।
জানা গেছে, সদর উপজেলার উলচাপাড়ার মোঃ অহিদ মিয়ার কন্যা আবিদা আক্তার পাখিকে বিয়ে দেন সুলতানপুরের ওই বীরমুক্তিযোদ্ধার পরিবারে। কিছুদিন সংসার করার পর স্বামী পক্ষকে অপবাদ দিয়ে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চুপিসারে পিতার বাড়িতে চলে যায়। পরে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দেন।
দায়ের করা মামলার তারিখে বিবাদীরা আদালতে এলেও অহিদ মিয়া ও তার কন্যা আদালতে আসতে নানা গড়িমসি করেন। আদালতে আসার জন্য বিবাদী পক্ষের নিকট থেকে প্রতি তারিখে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। পাশাপাশি শালিস-দরবারের নামে চলে নানা কূটকৌশল। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর শালিস-দরবারের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে সম্মত হন অহিদ মিয়া। শালিসে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কন্যার স্বামী পক্ষ থেকে অর্থ আদায় করেন।
সূত্র জানায়, একদিকে ইজ্জতহানি অন্যদিকে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন ধারায় দায়ের করা মামলার ভয়ে তটস্থ হয়ে অহিদ মিয়ার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে বিবাদীপক্ষ শালিস-দরবার মেনে নিয়ে অহিদ মিয়ার অনৈতিক দাবী আদায়ে বাধ্য হন। এই সময়ের মধ্যে তারা সামাজিকভাবে অপমানিত হন-ক্ষতিগ্রস্থ হন অর্থনৈতিকভাবে। এলাকায় ও পরিচিত মহলে সহজ-সরল হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহকেও এ মামলার জন্য সমাজে নানা কথা শুনতে হয়েছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী জানান, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে, আমাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা খসাতে এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপমানিত করতে আবিদা ও তার পিতা-মাতা এতসব মিথ্যা নাটক সাজিয়ে এ মামলা করেছিল। মামলার পর তারা নিয়মিত আদালতে আসত না। এমনকি তাদের দাবী করা নিরপেক্ষ স্বাক্ষীরাও আদালতে এসে স্বাক্ষ্য দেননি।
তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ ও অসুস্থ। তারা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। মামলা করেছে তারা, কিন্তু আদালতে আসার জন্যও তারা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এমনকি বীরমুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে তারা অনেক কটুক্তিও করেছে। তারা আমার সাথে অনেক অমানবিক ও অশালীন আচরণ করেছে। আমি খুবই মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ। মহান আল্লাহ সহায়, বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় আমাকেসহ অন্যান্যদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মুন্সী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এ মামলা দায়ের করা হয় ২০২০ সনে (নং-৬৯৪)। এ মামলার বাদী অহিদ মিয়ার কনিষ্ঠ কন্যা আবিদা আক্তার পাখি। এ মামলায় পাখিকে প্রায় সময়ই মারধর ও যৌতুক দাবীর অভিযোগ আনা হয়। আর বাদীর আপোষ-নিষ্পত্তিনামা দাখিল ও অভিযোগের সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর আদালত সকল বিবাদীদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।