নাসিরনগরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকে এক দশক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 20 December 2022, 74 বার পড়া হয়েছে,
নিউজ ডেস্ক : সময় তখন দুপুর ১২ টা। একটি কক্ষে চলছে পাঠদান। শিক্ষার্থীদের সবাই এক ক্লাসে পড়ে না। তাদের মধ্যে তনুশ্রী পঞ্চম শ্রেণির, দিগন্ত চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষক না থাকায় তাদের সবাইকে নিয়ে এক কক্ষে ক্লাস করেন একজন শিক্ষক।
এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নের ২৬নং নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ একদশক ধরে এখানে শুধু একজন প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। এই চিত্র এই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্কুলে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০০ চার জন। এর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন একজন। যদিও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষককের পদসংখ্যা পাঁচ।

২০১১সালে এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো.মফিজুল ইসলাম। এরপর থেকে এখানে আর কোন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। তিনি একাই নেন সব ক্লাস। এর মধ্যে কয়েকবার শিক্ষক নিয়োগ হলেও এখানে কাউকে দেয়া হয়নি। যারা নিয়োগ পান তারা আগেই তদবির আর উপঢৌক্ষ দিয়ে ভাগিয়ে নেন নিজেদের পছন্দের জায়গা।

এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন হাওয়ার বেষ্টিত নোযাগাঁও গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষগুলো।

সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক–সংকটের এই চিত্র চোখে পড়ে।
বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একতলা পাকা ভবন। ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলো সাজানো গোছানো। পাঁচ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একত্রে ক্লাস নিচ্ছেন একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়াটিতে শিক্ষকের পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন একজন।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তনুশ্রী দাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে স্যার আছেন একজন। তিনি একাই আমাদের সকলকে পড়ান। স্যার একজন হওয়ায় ২টার মধ্যে স্কুল ছটি হয়ে যায়। আমাদের আরো স্যারের দরকার। আমরা পড়তে চাই।

স্থানীয় অভিভাবক শাহালম মিয়া জানান, আমার দুইটা বাচ্চা এই স্কুলে পড়ে। আমারা হাওয়রের মানুষ। এমনিতেই অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের বাচ্চাগুলা যদি বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ার শিক্ষকও না পায়, এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হক বলেন, আমাদের ইউনিয়ন হাওর বেষ্ঠিত। এখানের বিদ্যালয়গুলোতে র্দীঘদিন যাবত শিক্ষকের সংকট রয়েছে। আমি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক মিটিং এ বলেছি। কিন্তু কোন সমাধান হয় না। গোয়ালনগর বা তার আশেপাশের যাদের এবার চাকুরি হয়েছে তাদের এখানে দিলে ভালো হত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কথা আমি বেশ কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এখানে শিক্ষক নাই।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.ইকবাল মিয়া জানান, নিয়োগের পর সবাই ভালো জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কথা আমি ডিপিও স্যারকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, নিয়োগের পর সবাই চায় ভালো জায়গায় যাওয়ার চেষ্ঠা করে। অনেক সময় বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তবে এবার সব উপক্ষো করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষক পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।