ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যা, আতঙ্কে সীমান্তবাসী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 21 May 2025, 27 বার পড়া হয়েছে,
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যার ঘটনা। গেল এক বছরে ভারত সীমান্তবর্তী এই জেলার তিন উপজেলায় ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত ৭ বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন।

এছাড়া তাদের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দাদের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই এই সীমান্তে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। সীমান্ত পাহারায় আগের চেয়ে বিএসএফ সদস্য বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন এবং মাদক চোরাচালানের কারণেই সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় বিএসএফকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিজিবির।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চরাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে কৃষক নিহত হয়। পরে পতাকা বৈঠক করে মরদেহ ফিরিয়ে আনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

গত ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হয় আসাদুল ইসলাম নামে আরেক যুবক।

এছাড়া ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে হাসান নামে এক যুবককে। সেই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছোড়া গুলিতে আহত হয় রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরও দুই যুবক।

সর্বশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করে বিএসএফ সদস্যরা। করেন ফাঁকা গুলিও।

মূলত সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়াতে দেন গবাদি পশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের। তবে এখন জমিতে ধান পাকলেও ভয়ে ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না। আর মিললেও মজুরি গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ।

সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে বর্তমান সরকারকে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।

বিজয়নগরে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে বিএসএফ ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যায়। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।

নিহত আল-আমিনের বাবা সুলতান মিয়া জানান, বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটাকে আনতে সীমান্ত এলাকায় যাওয়ার পর তার ছেলের ওপর গুলি করা হয়। তবে বিজিবির দাবি, সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের অসচেতনতা ও চোরাকারবারের কারণে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায় তখন বিএসএফ বাধা দেয়। তো আমাদের পক্ষ থেকেও সতর্ক হতে হবে যে শূন্য লাইনটা কোনটা। আমরা বারবার বলি ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে; কিন্তু এখন আমরা বিএসএফের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে কঠোরভাবে কথা বলছি।

সুলতানপুর ৬০ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, বিএসএফের প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কিভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামাতে আগে মাদক চোরাচালান আমাদের বন্ধ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের সীমান্ত এলাকার মানুষদের আরও সচেতন হতে হবে।