অর্থনীতি সংকট নয় বরং পূর্বসতর্কতা(precautious)

জনতার কন্ঠ, 11 August 2022, 666 বার পড়া হয়েছে,

অর্থনীতির অবস্থা সংকটে পড়েছে বিষয়টি এমন নয়, শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে তাও নয় বরং পূর্বসতর্কতা। সরকার যথা সময়ে সতর্ক হয়েছে, এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্যে দীর্ঘমেয়াদি মঙ্গল বয়ে আনবে আশা করি। তাই আমরা আতংকিত না হই বরং সচেতন হই।
বিদ্যুৎ, সার,জ্বালানি ও খাদ্য সহ অন্যান্য জরুরি দ্রব্য সামগ্রীতে সরকার জনস্বার্থে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এতে কম দামে বিদ্যুৎ, জ্বালানী, সার ও খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারি। ফলে সরকারের প্রচুর ব্যয়ভার বহন করতে হয়।
গত বছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, জ্বালানি খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে , সার ও খাদ্যে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে । আন্তর্জাতিক বাজারে এইসব দ্রব্যের দাম অনেক বেশি হলেও সরকারের ভর্তুকির কারণে বাংলাদেশের জনগণ কম দামে ক্রয় করতে পারতো। এইসব খাতে জনস্বার্থে সরকার প্রচুর পরিমাণ আমদানি ব্যয় করে থাকে।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা, রপ্তানি আয় কম ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গত এক বছরে আমাদের রিজার্ভ ৭ বিলিয়ন কমেছে।

রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় আমাদের Balance of payment তথা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সর্বশেষ কয়েকদিন আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (ACU) প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় শোধ করতে হয়েছে এবং সেকারণে রিজার্ভ কমেছে। গত এক বছরে রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন থেকে কমে ৩৯ বিলিয়ন হয়েছে।

যদি প্রতি বছর আমদানি ব্যয় মেটাতে আমাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হাত দিতে হয়,এক সময় রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে, দেশ বিপদে পড়বে। তাই সতর্কতা জরুরি।
অনেকে ফাকা ভুলি আওড়ান, যে আমাদের রিজার্ভে এখনো ৩৯ বিলিয়ন ডলার আছে যা দ্বারা আগামী ৩ মাস চলা যাবে। আরে ভাই, রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন হলেও আপনার ঋণ কত?? যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তার চেয়ে বেশি ঋণ আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ঋণ একসাথে দিতে হবেনা তা ঠিক আছে।
কিস্তিতে ঋণ শোধ করতে হয়।
তবে আশার বাণী হলো, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে। তাই বাংলাদেশের উপর সব দেশ ও সংস্থার আস্থা আছে। এটা আমাদের ক্রেডিট। আমরা শ্রীলঙ্কা নয়।।

বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণের পাশাপাশি Balance Of Payment এর দেনা শোধ করতে মূলত IMF থেকে সদস্য দেশগুলো ঋণ নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও আই এম এফ থেকে ঋণ নিয়েছে এবং শর্ত অনুযায়ী নিয়মিতভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছে।ইতোমধ্যে IMF বাংলাদেশকে সতর্ক করে করেছে যেনো বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সার ও খাদ্য সামগ্রীতে ভর্তুকি হ্রাস করা হয়।

সরকার বাস্তবতার নিরিখে পূর্বসতর্কতা মূলক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভর্তুকি হ্রাস করে, তাই জ্বালানির দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এইসব দ্রব্যের দাম বেশি,আমাদের প্রতিবেশী দেশেও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেছে। তাই বাংলাদেশও সমন্বয় করেছে। যেকারণে দাম বেড়েছে।

রাষ্টের অর্থনৈতিক অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকার ব্যয় সংকোচন নীতির পথে হাটছে।

সরকারের সমূহ করণীয়ঃ
১) অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানো
২) শখের দ্রব্যের আমদানি হ্রাস করা
৩) আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন করা
৪) রপ্তানি বাজারকে উৎসাহিত করা
৫) প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান দেয়া, তাদেরকে বেশি বেশি মোটিভেট করা যাতে হন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠায়।
৬) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির লাগাম টানা।

সামসুল হক বাবুল, বিসিএস শিক্ষা (অর্থনীতি)
সহকারী অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ।