—
পহেলা এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘গ্রানাডা ট্র্যাজেডি দিবস’। মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য চরম বেদনা-বিধূর একটি দিন। আজ থেকে সোয়া পাঁচশ’ বছর আগের কথা। রাজা ফার্দিনান্দ বিশ্বের ইতিহাসে জন্ম দেন চরম ঘৃণ্যতম এক প্রতারণার। যেই প্রতারণার মাধ্যমেই স্পেনের রাজধানীতে হাজার হাজার মুসলমান নারী-পুরুষকে জীবন্ত দগ্ধ করে মেরেছিলেন রাজা ফার্দিনান্দ। খ্রিস্টান সম্প্রদায় আজ অবধি এই দিনটিকে ‘এপ্রিল ফুল’ (এপ্রিলের বোকা) দিবস হিসেবে বেশ সাড়ম্বরেই পালন করে থাকেন। তারচেয়েও বড়ো দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, বিশ্বায়নের গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে মুসলমানদের মধ্যেও বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইদানিংকালে ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করতেও উদ্বুদ্ধ হয় বৈ কি।
—
১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল জনপদ স্পেনে খ্রিস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে উল্লোসিত হয়ে ছুটে আসে রাজধানী গ্রানাডায়। রাজা ফার্দিনান্দের নির্দেশে জ্বালিয়ে দেয় আশপাশের সব শস্য খামার। পোড়ানো হয় শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র ‘ভৈগা উপত্যকা’। এতে গোটা শহরজুড়েই দুর্ভিক্ষ প্রবলাকার ধারণ করে। আর এই মওকাতেই প্রতারক ফার্দিনান্দ দেন আরেকটি ঘোষণা। ‘মুসলমানরা শহরের প্রধান ফটক খুলে দিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নিলে বিনা রক্তপাতেই দেয়া হবে মুক্তি।’ দুর্ভিক্ষতাড়িত গ্রানাডাবাসী সেদিন অসহায় নারী-নিষ্পাপ শিশুদের জীবনের দিকে তাকিয়ে, খ্রিস্টানদের আশ্বাসে স্থাপন করে বিশ্বাস, খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক; সবাইকে নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে।
—
মানব সভ্যতার কলঙ্ক, বিশ্বাসঘাতক রাজা ফার্দিনান্দ মুসলমানদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ সেদিনকে পুরোপুরিভাবেই গ্রহণ করেছিলো। শহরে প্রবেশ করেই খ্রিস্টান বাহিনী মুসলমানদের প্রত্যেকটি মসজিদেই একযোগে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর মসজিদগুলোর চারদিকে ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন! আর বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠেন মানুষরূপী হায়েনাগুলো। অগণিত পুরুষ, মহিলা ও শিশু সেইদিন অসহায়ভাবে আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায়। মুসলমানদের সেদিনকার আর্তচিৎকারে গ্রানাডার আকাশ-বাতাস যখন হচ্ছিলো প্রকম্পিত, ঠিক তখনই রাণী ইসাবেলা কপট হাসি হেসে বলেছিলেন, ‘হায়রে মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা! শত্রুর আশ্বাসে কি কেউ বিশ্বাস করে?’
—
এহেন ঘটনার বহু শতক পরের কথা, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা এপ্রিল তারিখে গ্রানাডা ট্র্যাজেডির পাঁচশ’ বছর উদযাপন উপলক্ষে স্পেনে আড়ম্বরপূর্ণ একটা সভায় মিলিত হয়েছিলো বিশ্ব খ্রিস্টান সম্প্রদায়। সেখানে তারা নতুন করে শপথ নেয় ‘একচ্ছত্র খ্রিস্টান বিশ্ব’ প্রতিষ্ঠা করার। তারা বিশ্বব্যাপী মুসলমান জাগরণকে ঠেকাতেই গড়ে তুলেন ‘হলি মেরী ফাণ্ড।’ আর ওই অনুষ্ঠানে গৃহিত শপথের ধারাবাহিকতাতেই গোটা খ্রিস্টান জাতি নানান ছুতোয় মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, লেবানন প্রভৃতি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে একের পর এক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেই চলেছে! আবার এক শ্রেণীর মুসলমান তাদের পদলেহন করেই যাচ্ছে!
—
‘জাবাল আল তারেক’, অর্থাৎ ‘তারেকের পাহাড়’ বা ‘জাবালুত তারেক’। আজকে অবধি ঠিক সেখানটাতেই সগর্বেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই ৭১১ খ্রিষ্টাব্দের কথা। খোলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তীত পর্যায়। উমাইয়া খিলাফত আমলে মুসলমানরা ‘তারেক-বিন জিয়াদ’র নেতৃত্বে ভূ-মধ্যসাগরের উত্তর তীরবর্তীস্থ স্পেনকে রাজা রডারিকের দু:শাসন থেকে রক্ষা করেছিলেন। অথচ আজকের বাস্তবতায় ! আমরা কি দেখছি-শুনছি আর জানছি? চরমভাবে মুসলিম বিদ্বেষী ইউরোপিয়ানরা সেই ‘জাবাল আল তারেক’র নামটিকেই বদলে রেখেছে ‘জিব্রাল্টার’! কিন্তু কেবল নাম বদলালেই কি ইতিহাসকে বদলানো যায়?
—
ইংরেজরা ভারত উপ-মহাদেশের রাজক্ষমতা দীর্ঘ দু’শ বছর কুক্ষিগত করে রেখেছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীন ফিলিস্তিনে তারা অবাঞ্ছিত ইহুদীদেরকে পুষেই রেখেছেন। অপরদিকে নতুন নতুন আর অভিনব নানান নামে ‘মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আবিষ্কার করাটাই যেনো সাম্রাজ্যবাদীদের নিকট এক ধরণের প্রবণতা হয়েই দাঁড়িয়েছে। নব্য ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলা’রা আজকের বিশ্বায়নের দিনে এসেও বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বজুড়েই মুসলিম উম্মাহ্’র বিরুদ্ধে লিপ্ত রয়েছেন অত্যন্ত সুগভীর ষড়যন্ত্রে। তাদের ওইসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আমাদেরকে থাকতে হবে সজাগ।