১৯৭১ সালে ২৫ মাচের্র পর থেকে সুদীঘর্ ৯ মাস বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীনতার দুয়ারে নিয়ে উপনীত হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝঁাপিয়ে পড়ে বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতা। ফলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অজির্ত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন এসে ধরা দেয়। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূযের্র আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নিবির্চার শোষণ, বঞ্চনা আর নিযার্তনের কালো অধ্যায়। তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস। বিজয় দিবস আসলে আমাদের ভাবনা মনের হৃদয়ে উঁকি দিতে থাকে। তাই এদিন আমাদের সবার অতি প্রিয়, অতি আনন্দের দিন। এই দিনটির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে ও বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা। মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশ নামে একটি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা।
আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ও গৌরবের দিন হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা বিজয় অর্জন করে আনে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সেইদিন বিজয় অর্জন করেছি এবং পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।
১৯৪৭ সালে যখন ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে যায় তখন পাকিস্তানের দুটি অংশ তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান অপরটি হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর চরম শাসন শোষণ করে আসছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল কিন্তু জোরালো প্রতিবাদ শুরু হয় যখন ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার পরেও পূর্ব পাকিস্তানের হাতে পশ্চিম পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।
ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তারপরই শুরু হয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই সংগ্রামে ধনী-গরীব, হিন্দু-মুসলিম, কৃষক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান বিজয় লাভ করে।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পেয়েছি। এই দিনটি যে শুধু আমাদের জন্য বিজয়ের দিন তা নয় বরং এই দিনটি বেদনার দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের কত নিরীহ মানুষকে পাকবাহিনীরা অকারনে হত্যা করেছে। সব মিলিয়ে এ দিনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিন।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে পেয়েছি। এই দিনটি আমাদের কাছে গৌরবের দিন আমাদের অহংকার এর দিন। তাই এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হয়। আমরা যদি এই বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তবে আমাদের পূর্বপুরুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে।
– কোহিনূর আক্তার প্রিয়া,নারী সংগঠক ও সমাজ সেবিকা