ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদী এবং কাজলা বিলের পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিজয়নগর উপজেলার অন্তত দশটি গ্রাম। এছাড়াও পানি বেড়ে জেলার নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে কৃষকের জমি ও ফসলের মাঠ। পাশাপাশি পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পানি বন্দি অবস্থায় আছে তিন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে চরম দূর্ভোগে পরেছে বন্যা কবলিত মানুষ গুলো। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থতদের। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবী এ লক্ষ্য কাজ করছেন তারা। অচিরেই ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়াও জেলার নাসিরনগর, সরাইল ও আখাউড়া উপজেলার ৫৭টি স্কুলে পানি উঠে যাওয়ায় তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, জেলার নাসিরনগর উপজেলার ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টি, পার্শ্ববর্তী সরাইল উপজেলার ৯টি ও আখাউড়া উপজেলার ৩টি বিদ্যালয় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পূর্বাঞ্চলের বিজয়নগর উপজেলার দত্ত খোলা, চর ইসলামপুর, মনিপুর, পত্তন, লক্ষিমোড়া, চান্দুরা, কালিসিমা সহ অন্তত ১০টি গ্রাম। পানিতে গেছে কৃষকের জমি,ফসলের মাঠ ও রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানি বন্ধি অবস্থায় কর্মহীন অবস্থায় আছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন দূর্ভোগের মধ্যে থাকলেও সরকারী বা বেসরকারী কোনো ধরনের ত্রান পৌছেনি দূর্গত এলাকায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষ গুলো।
মনিপুর এলাকার নায়েব মিয়া বলেন, গরু আছে কয়েকটা, ঘরে বাচ্চা আছে তাদের নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় আছি। রান্না ঘর টিউবওয়েল বাথরুম সব পানির নিচ তলিয়ে গেছে। খুব সমস্যার মধ্যে আছি। গরু রাখার কোনো জায়গা নেই । অন্য এলাকায় নিয়ে গরু রেখে আসছি। এভাবে যদি পানি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের বাড়ী ছাড়া হতে হবে।
চান্দুরা ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের জয়নাল ইসলাম বলেন,খুব অসহায় অবস্থায় আছি আমরা। বাড়ীঘর পানির নিচে চলে যাচ্ছে। মাছের খামার, পুুকুরের মাছ সবকিছু ভেসে গেছে। আমরার অবস্থা খুব খারাপ। কষ্টের বিষয় হল এখানো পর্যন্ত আমাদের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। সরকারী লোক বা সমাজের কেউ এসে জানতেও চাইল না আমরা কিভাবে আছি। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা এসে কত কথা বলে এখন কেউ আমাদের পাশে নাই।
আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, প্রতিদিন আস্তে আস্তে পানি বাড়ছে। বাড়ীর উঠানে কোমড় পানি। বাড়ীঘর থেকে বের হতে পারছি না। নামাজ পড়তে পারি না,বাথরুমে যেতে পারি না, রান্না করতেও পারি না সব জায়গায় শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভিতরে কোনো রকম রান্না করে খেয়ে বেচে আছি। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ কোনো খোজ নেয়নি।