প্রথম কে কখন ও কোথায় স্লোগানটি দিয়েছিল? ড. এস এম শাহনূর

জনতার কন্ঠ, 27 September 2024, 49 বার পড়া হয়েছে,

জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সবচেয়ে সুচালো, শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান “তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার”
এই স্লোগানটি প্রথমে সমন্বয়কদের মুখে নাকি কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর মুখে শোনা গিয়েছিল? ইতিহাস বিকৃত হওয়ার আগে সঠিক ইতিহাস জেনে রাখি।

১৯৬৮ সালের শেষের দিকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে ১১ দফার দাবি আদায়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তান। আর ওই আন্দোলনে স্লোগান উঠেছিল ‘তুমি কে আমি কে/ বাঙালি বাঙালি’। স্লোগানটিতে দুটো প্রশ্ন ও প্রশ্নোত্তর থাকলেও সাড়ে পাঁচ দশক পর জুলাই/২০২৪ এ এসে প্রশ্নের জবাবের ধরন ও মেজাজ পাল্টে গেছে। তখন বাঙালি বাঙালি শব্দ দুটোতে ছিল একতা-ঐকতানের সুর। আর এখন রাজাকার রাজাকার শব্দ দুটো ছাত্র-জনতার প্রবল ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও ব্যঙ্গের দ্যোতনা বারুদের মত ছড়িয়ে দিয়েছে।

১৪ জুলাই/২০২৪ রাতে প্রথমে ঢাবির হলপাড়া থেকে স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে শক্তি, বিদ্রোহ, প্রত্যাখানের এই স্লোগান ভেসে আসে। তবু এ স্লোগানের উৎপত্তির পেছনে রয়েছে একটি ছোটো গল্প।

সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী ও জার্মান ভিত্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম টিভিস্তার সংবাদদাতা ওবায়দুর রহমান সোহান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর অনেকে ফেসবুকে লিখতে থাকে ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’। একপর্যায়ে বিজয় একাত্তর হলের পদ্মা ব্লকের বেলকনি থেকে শিক্ষার্থীরা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে সম্বোধন করতে থাকে। এর উত্তরে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরাও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে সম্বোধন করে। পরে তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’। মূহুর্তের মধ্যে স্লোগানটি হলপাড়াসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসি আসে আন্দোলনকারীরা। এই সময় তারা “তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকে। কিছু সময় পর তারা এই স্লোগানে কিছুটা পরিবর্তন এনে বলে- তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার।”

ওই রাতের ঘটনা জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের ঢাবি প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন হৃদয় বলেন, “ওই দিন রাত ১০ টার দিকে সর্বপ্রথম স্লোগান শুরু হয় হল পাড়া থেকে। সম্ভবত সূর্যসেন হল থেকে। স্লোগান ছিল, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’।

ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই ঢাবির বহু শিক্ষার্থী প্রথমে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন- “চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”; “তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার”; “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার”। রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জসিমউদ্দিন হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা হলের ভেতর থেকে স্লোগান দিতে থাকে “তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার”। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে স্লোগানটি খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলগুলোতেও ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে রাত ১১ টার দিকে হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা “তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার” স্লোগান দিতে থাকেন। তবে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে আসার পর তাদের স্লোগানে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। এ সময় তারা বলতে থাকে “তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার”।

তথ্যঋণ:
[১] ‘বাংলাদেশের গণআন্দোলন: স্লোগান প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার’ / সিদ্দিকুর রহমান স্বপন
[২] ঢাকা ট্রিবিউন।
[৩] আমাদের সময়

লেখক: আন্তর্জাতিক কবি ও গবেষক।