এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে লিটারে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। আর গত পাঁচ মাসে বেড়েছে লিটারে ২২ থেকে ২৫ টাকা।
ইউক্রেন নিয়ে সংকট শুরুর পর থেকে তেলের দাম কেবল বাড়ছেই। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ, কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার দেশে তেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কাণ্ড।
খোলাবাজারে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে দফায় দফায়। বোতলজাত তেলের তুলনায় খোলা তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বিক্রেতা ফেঁদেছেন নতুন কায়দা। বোতল কেটে বিক্রি করছেন সেই তেল। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেলের সঙ্গে বোতলের তেল মিশিয়ে বিক্রি করছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। এদিকে তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামে অতীষ্ঠ নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তেলের দামে লাগাম টানতে সরকারি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
বোতলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হারে বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। লুজ পাম অয়েলের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারে কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এবিষয়ে সরকারের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। এক দিকে করোনায় মানুষের জীবন অতীষ্ঠ। ব্যবসা আগের মতো নেই। এর মধ্যে একেকবার একেক পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এক কেজি সয়াবিন তেলের দাম ১৩০ টাকা। কেজি ৫০০ টাকা হলেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ তেল ছাড়া তো রান্না করা সম্ভব না। তাই দাম যতই হোক তেল কিনতেই হবে। তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে অবাক হবারই কথা। যে খোলা সয়াবিন তেল ছিল ৯০ টাকা কেজি, তা দেখতে দেখতে ১৩০ টাকা হয়ে গেছে। ৪৬০ টাকা বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেল এখন কোম্পানি ভেদে ৫৬০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হিসাব করে দেখেছি এখন খোলা সয়াবিন তেলের থেকে ৫ লিটারের বোতল কিনলে ক্রেতাদের খরচ কম পড়ে। কারণ ৫ লিটারের বোতলে সয়াবিল তেলে থাকে ৪ কেজি ৭০০ গ্রামের মতো। এতে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা করে ধরলে ৫ লিটারের দাম আসে ৬১০ টাকা। কিছু কিছু কোম্পানির বোতলের সয়াবিন তেল এখন ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মুদি দোকানি বলেন, দাম বেশি হলেও বোতলের থেকে খোলা সোয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি। কারণ দাম বেশি হওয়ায় এখন বেশির ভাগ ক্রেতা আধাকেজি, এককেজি করে সয়াবিন তেল কিনছেন। ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরাও প্রতিদিন ১০-১২টি ৫ লিটারের বোতল কেটে খোলা সয়বিন হিসেবে বিক্রি করছি। এতে আমাদেরও লাভ বেশি হচ্ছে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আমাদের তেলের বাজার ৫-৭টি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। তারা দাম বাড়ালে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হই। তিনি আরও বলেন, পাইকারিতে এখন সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা ১০২ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এই দামে তেল কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলে তা কিছুতেই স্বাভাবিক না। খুচরা ব্যবসায়ীর সমস্ত খরচ ও লাভ যোগ করেও সয়াবিন তেলের কেজি ১১৫ টাকার মধ্যে থাকা উচিত।
সপ্তাহখানেক ধরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। ডিলাররা বলছেন, কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ সংকট। বাজারে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই ডিলারদের কাছ থেকে তাঁরা তেল পাচ্ছেন না। এ জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এই ভোজ্যতেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পাঁচ লিটার বোতলের তেল নেই। এক ও দুই লিটার বোতলের তেলও কম পাওয়া যাচ্ছে। ডিলার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে তেল মজুত করে ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।
আদিত্ব্য কামাল, বার্তা সম্পাদক জনতার খবর