বিএডিসি’র ৮০ হাজার টন সার গায়েব

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 7 January 2023, 87 বার পড়া হয়েছে,

বিএডিসি’র ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ৮০ হাজার টন এমওপি (পটাশ) সারের হদিস নেই। তার মধ্যে আশুগঞ্জ ঘাটে পোটন ট্রেডার্সের অধীনে ১১ হাজার টন ও কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের অধীনে ১০ হাজার টন সারের হদিস মিলছে না। সেপ্টেম্বরে বিএডিসির গোপন তদন্তে আশুগঞ্জ ঘাটের ঘটনাটি উদ্ঘাটিত হলেও বিষয়টি চেপে রাখে কর্তৃপক্ষ।

আশুগঞ্জ ঘাট ছাড়াও পোটন ট্রেডার্সের কাছে এখনো পাওনা প্রায় ৬০ হাজার টন এমওপি সার। এ সার কোথায় আছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ জানে না। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে কালোবাজারে সার বিক্রি করে ১১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মালিক ৮-১০ হাজার টন টিএসপি সার গত ৬ মাস ধরে বিএডিসিকে বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এ সারের মূল্য ২০ কোটি টাকা। বিএডিসির বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব সার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন সার গুদামে পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিল দুটি প্রতিষ্ঠানের। পোটন ট্রেডার্সের মালিক কামরুল আশরাফ খান পোটন ও কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মালিক মো. মোখলেছুর রহমান।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান পোটন। এ সমিতির প্রভাব খাটিয়ে তিনি সারের ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অনেকেরই ধারণা। আশুগঞ্জ ঘাটে সারের হদিস নেই এ বিষয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর যুগান্তরে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে বিসিআইসির আমদানিকৃত ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ হাজার টন ইউরিয়া সার লুট করেছে পোটন ট্রেডার্স। এ বিষয়ে ৩ জানুয়ারি যুগান্তরে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট দুদককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বৃহস্পতিবার।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বিএডিসির দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা সব ধরনের নন ইউরিয়া (টিএসপি/ডিএপি/এমওপি) সার দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্স ও কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মাধ্যমে আশুগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াপাড়া ঘাটসহ দেশের বিভিন্ন ঘাটে সার পাঠানো হয়েছিল। ২০২০ সালে বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব সার ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে পোটন ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন সার গুদামে পাঠানোর কথা ছিল। পরিবহণের নানা ঝামেলা দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে সার গুদামে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমার ছিল না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ পাঠানোর দায়িত্ব আমার ছিল কিন্তু ঘাট থেকে সার পাঠানোর তদারকি করত হেড অফিস কর্তৃপক্ষ। কি পরিমাণ সার পোটন ট্রেডার্সের কাছে পাওনা তা আমি বলতে পারব না।

বিষয়টি জানতে চাইলে বিএডিসির সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) মো. ইব্রাহিম জানান, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম তার আগে ঘটনাটি ঘটে। পরে আমরা নভেম্বরে পোটন ট্রেডার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করি এবং তাকে এবার কাজ দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠান মালিক সার বুঝিয়ে দেবে বলে বারবার সময় নিয়েছেন।

পরে দায়িত্বে আসা আরেক জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) মো. আবদুল হালিম বলেন পোটন ট্রেডার্সের কাছে এমওপি সারের পাওনার পরিমাণ এখনো সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি। তিনি এখনো কিছু কিছু সার পাঠাচ্ছেন গুদামে। তবে আনুমানিক ৮০ হাজার টন সার তার কাছে পাওনা বিএডিসির। এ সার কোথায় আছে আমরা জানি না। তিনি সারের সঠিক মজুত দেখাতে পারছেন না।

বিষয়টি জানতে পোটন ট্রেডার্সের মালিক কামরুল আশরাফ খান পোটনের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তার কর্মচারী হারুনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না। সারের হিসাব পাওনা-দেনার বিষয় একমাত্র পোটন সাহেবই বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোখলেছুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার আশুগঞ্জ ঘাটের প্রতিনিধি জামাল সরদার এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

বিএডিসির সদস্য পরিচালক আবদুস সামাদ জানান, পোটন ট্রেডার্স এখনো কিছু কিছু সার বুঝিয়ে দিচ্ছে। তবে যথাসময়ে গুদামে সার পৌঁছায়নি একথা সত্য। পোটন বারবার সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করায় তাকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। সার পরিবহণের কাজ এবার তাকে দেওয়া হয়নি। পাওনা সার শিগগিরই বুঝিয়ে না দিলে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।