জুলাই ১৪, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রোববার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েক শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন হল থেকে মিছিল শুরু করে। এরপর রাত ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে তারা ঢাবি ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়।
সেই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’,
‘চেয়েছিলাম অধিকার
হয়ে গেলাম রাজাকার’,
‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা
দেশটা কারো বাপের না’,
‘তুমি কে আমি কে?
রাজাকার রাজাকার’
‘কে বলেছে, কে বলেছে?
স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’
ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
যে কারণে এই স্লোগানের উৎপত্তি ?
ঐ দিন (রোববার) বিকেলে বঙ্গভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন।
“কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে!”
“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।”
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উক্ত মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে মিছিল করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অন্যায্য কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় এখানে অপমান করা হয়েছে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, “এখন যে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে, এটা আমরা ডাকিনি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন হল থেকে এসে এই বিক্ষোভ করছেন।”
সেই রাতে বিজয় একাত্তর সহ অনেক হলে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের বাধা উপেক্ষা করেই অনেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে যোগ দেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রোকেয়া হলের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী হলের গেট ভেঙে মিছিল নিয়ে বের হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান। সেখান থেকে তারা শামসুন্নাহার হলের সামনে যান। পরে দুই হলের শিক্ষার্থীরা মিলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। সুফিয়া হল থেকেও শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরাও সেখানে যোগ দেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে মিছিল টিএসসি থেকে শাহবাগ এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মূলতঃ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভীষণ মর্মাহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে; স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণাদায়ী স্লোগান ‘তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি’ বিকৃত করে যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার-রাজাকার’।
লেখক: আন্তর্জাতিক কবি ও গবেষক।