উত্তর কেরিয়া-বর্তমান বিশ্বের প্রথম শ্রেণির স্বৈরাচার কিম জং উনের দেশ। আয়তনের চেয়ে জনসংখ্যা কম হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার জোটে না মানুষের পাতে।
আয়ের বারো আনায় নিয়ে নেয় সরকার। উচ্ছিষ্টটুকু দিয়ে প্রতিদিনের খাবার, বেঁচে থাকার টুকিটাকি কিনতেই নাকানি-চুবানি অবস্থা। এর মধ্যে শাঁ-শাঁ করে বেড়ে চলছে খাদ্যপণ্যের দাম। তালিকার শীর্ষে আছে চাল এবং ভুট্টা। হাতে কড়ি নেই, পেট মানে না! ক্ষুধার জ্বালায় নিরুপায় হয়ে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন দেশটির হতদরিদ্ররা। একবেলা আধপেটা, একবেলা উপস, একবেলা ঘাস-পাতা! জাপানের রাষ্ট্রীয় দৈনিক এনএইচকে ও দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমগুলোর খবরে উত্তর কোরীয়দের দিনযাপনের এ নিত্যচিত্র ফুটে উঠেছে।
পিয়ংইয়ং এবং শিনউইজুতে এখন কেজিপ্রতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫,৩০০ (প্রায় ৫৪৮ টাকা) এবং ৫৩২০ (প্রায় ৫৫০ টাকা) কেপিডব্লিউতে (কোরিয়ান পিপলস ওন) আর হেসানে ৫৬০০ কেপিডব্লিউতে (প্রায় ৫৭৯$) ১২ জুনের ডেউলি এনকে এর খবর অনুযায়ী। ৩০ মে এর তুলনায় পিয়ংইয়ং ও হেসানে প্রতি কেজি চালে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ৩০০ কেপিডব্লিউ করে। অপর দিকে শিনউইজুতে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ ওন করে। ভুট্টার বাজারের অবস্থাও খুব শোচনীয়। ৩০ মে এর তুলনায়, প্রতি পিস ভুট্টার দাম ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০০ কেপিডাব্লিউ। ১২ জুনের বাজার দর অনুযায়ী, পিয়ংইয়েং ২৮০০ কেপিডব্লিউ (প্রায় ২৯০$), শিনউইজুতে ২৮৩০ কেপিডব্লিউ (২৯৩$) এবং হেসানে ২৮৫০ কেপিডব্লিউ (২৯৫$) করে বেড়েছে ভুট্টার দাম। অন্যান্য সময়ের তুলনায় চাল এবং ভুট্টার দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৬% থেকে ৭% শতাংশ করে। উ. কোরিয়ার সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মে মাসের শেষ থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পড়তে থাকে দাম। কারণ এ মৌসুমটাতে আলু আর যবের চাষ শুরু করেন চাষিরা। কিন্তু খরার কারণে এবার পর্যাপ্ত পরিসরে ফলানো যাচ্ছে না আলু-যব। ফলে স্থিতিশীলতা আসছে না বাজারে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের অনুমান অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়াতে ৮,৬০,০০০ টন খাদ্য সংকট বিরাজমান। অবশ্য, খাদ্যমূল্যের এমন ক্রমবৃদ্ধি দেশটিতে নতুন কিছু নয়। গত বছরেও ঠিক একই সময় দৈনন্দিন কিছু খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হয় উত্তর কোরিয়াতে। রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ কলা, কফি এবং ব্ল্যাক টি এর দাম যথাক্রমে ৪৫ (৪১৮৪$), ১০০ (৯২৯৮$) এবং ৭৫(৬৯৭৪$) ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়- পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলন না হওয়ায় তৈরি হয়েছে খাদ্য সংকট।
শুধু তাই নয়, মূল বাজারের অদূরে অবস্থিত খুচরা বাজারগুলো এখন ফাঁকা। এসব বাজারে মূলত নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চোরাই পথে আমদানীকৃত মালামাল বেচা-কেনাই ছিল এসব বাজারের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু দুই বছর ধরে সব সীমান্ত বন্ধ থাকায়, মালামাল আমদানিতে ভাটা পড়েছে। বেশি দামে খাবার কিনতে কিনতে ট্যাকের কড়ি শেষ! বাজারে ফিরে এসেছে নতুন চিত্র। অল্প অল্প করে ভেঙে ভেঙে সদাই করছেন খদ্দেররা। চীন থেকে আমদানি করা সয়াবিন তেল আগে কিনতেন ১ কেজি/২ কেজি করে, এখন কিনছেন ১০০, ২০০ কিংবা ৫০০ গ্রামের বিভিন্ন বোতলে। অর্থাৎ সাশ্রয়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন তারা। চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সাথে সামাল দিতেই এমন পথ বেছে নিচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।