আখাউড়া সীমন্তে শহিদদের গণকবরের স্মৃতিফলক খুলে ছুড়ে ফেলল বিএসএফ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 13 January 2022, 200 বার পড়া হয়েছে,

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একাত্তরের আড়াইশ শহিদ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর (সেনারবাদী-বধ্যভূমি) স্মৃতিফলক খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ জওয়ানরা, খবর যুগান্তের।

বুধবার সকালে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ‘২০২১/আই-এস’ সীমান্ত পিলারের প্রায় ২০ গজ দক্ষিণে সেনারবাদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খবর পেয়ে আখাউড়া ৬০ বিজিবি জওয়ানরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রতিবাদ জানান। যদিও এ সময় ভারতীয় বিএসএফ কোনো জওয়ান ছিল না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সেনারবাদী গ্রামের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা দক্ষিণ রামনগর সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে (সীমান্তের শূন্যরেখায়) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহিদের গণকবরটির অবস্থান।

নোম্যানসল্যান্ডের ওই গণকবরে অনাদরে যুগযুগ ধরে শুয়ে আছেন অন্তত ২৫০ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি হাসপাতালে যেসব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মারা যেতেন তাদের এখানে এনে দাফন করা হতো। তাছাড়াও পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের ওখানটায় দাফন করা হয়। কোনো কোনো কবরে তিন-চারজনকেও সমাহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা সীমান্তের শূন্য রেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার্থে  ২০১৯ সালে ৮ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট ঢাকা (সেনারবাদী-বধ্যভূমি) স্মৃতিফলক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সীমান্তের বাংলাদেশি অংশে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসহাক মিয়া, মোশাররফ হোসেনসহ একাধিক লোকজন জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৭/৮জন সশস্ত্র ভারতীয় বিএসএফ জওয়ান বাংলাদেশের সেনারবাদী সীমান্তে আসেন। এ সময় বিএসএফ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে (সেনারবাদী-বধ্যভূমি) স্মৃতিফলকের সাইনবোর্ডটি খুলে ছুড়ে ফেলে দেয়।

এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা যুবক মোশাররফ হোসেন প্রতিবাদ করলে বিএসএফ তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ধমক দিয়ে তার দিকে তেড়ে আসেন। বিষয়টি সে তাৎক্ষণিকভাবে আখাউড়া আইসিপি বিজিবিকে অবিহত করেন। এ সময় বিজিবি জওয়ানদের আসতে দেখে বিএসএফ জওয়ানরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

খবর পেয়ে আখাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিএসএফের এ ধরনের জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান।

মুক্তিযোদ্ধা নজরুল হক ধনু, আব্দুস ছামাদ, বাহার মিয়া মালদার, জামশেদ শাহ, মতিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরবর্তী সময়ের শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী ’৭৪ সালের শেষ দিকে সেনারবাদী গণকবর পরিদর্শন করে শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার জন্য তৎকালীন ১০ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। পরবর্তীতে সীমান্তের শূন্য রেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার্থে ২০১৯ সালে ৮ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট ঢাকা (সেনারবাদী – বধ্যভূমি) স্মৃতিফলক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্তের বাংলাদেশি অংশে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। বিএসএফ ওই স্মৃতিফলক ছুড়ে ফেলেননি, তারা বাংলাদেশকে ছুড়ে ফেলেছেন। ভারতীয় বিএসএফের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা।

আখাউড়া আইসিপি ৬০ বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মো. ফরিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। বুধবার সন্ধ্যায় বিএসএফকে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হবে।