সম্পর্ক কখনো চুকে যায় না। বাঁশের গোড়ায় করুলের জন্ম। আর সেই করুল থেকেই যাত্রা শুরু হয় বাঁশের। তারপরই ধারণ করে নানান নাম। যদিওবা এসব নাম মানুষেরই দেওয়া। ডেগা, কচি, কড়া, কাঁচা আপোক্ত, পোক্ত, পাকনা এমনি বহু নামে আমরা বাঁশকে ডাকতে পারি। এইসব পরিবর্তিত কালক্রমে ঘটে নানান ধরণের পরিবর্তন-পরিবর্ধনের পালা। তবে হাজার পরিবর্তনেও বাঁশের ঝাড়ের বৈশিষ্ট্য কিন্তু হারায় না। একটু হলেও মিল থাকেই।
—
বাঁশের জীবন চিত্রের সাথে কি আমাদের জীবনের মিল নেই? ভাববার বিষয় বটে। হ্যা,এই বাঁশের সাথে মানুষের রয়েছে অদ্ভুত রকম সাদৃশ্য। আমাদের বাঙালি সমাজে এই বাঁশকে নিয়েও রয়েছে নানা ঢঙের উপকথা। যেমন- ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ,পাকলে করে ঠাস ঠাস’। এমনি আরো কতো কি। কেবল ঝাড় থেকে একটা বাঁশ কেটে ফেললেই কিন্তু কোননোভাবেই পৃথক করা যায় না ঝাড় থেকে। কদাচ দু’দফা এমনকি কয়েক রূপ বদলেও নয়। এটাই হলো বাঁশের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।
—
একই ঝাড়ের বাঁশ। লাগে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন কাজে। নশ্বর এই দুনিয়ায় আবির্ভাব থেকে শুরু করে চিরবিদাইয়ের কালেও এটা চাই-ই চাই। জন্মের পর শিশুর নাড়ি কাঁটা, মুসলিম ছেলেদের খৎনায় (একদা হাজামরা ব্যবহার করতো বাঁশের ছিলকা), বসতঘরের পালা-বেড়া-চাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত নানান রকমের তৈজসপত্র,বাঁধ নির্মাণের খুঁটি,খাল পারাপারের সাঁকো, টয়লেটের খুঁটি-পালা-বেড়া, নির্মাণ কাজ করার মাচা-খুঁটি, মারণাস্ত্র, কবরের ছানি ইত্যাদি হাজারো প্রকারের কাজেই এই বাঁশের ব্যবহার অনস্বীকার্য। আবার বিশেষায়িত বাঁশ কিন্তু উৎকৃষ্ট মানের সব্জিও বটে।
—
এক কথায় বলতে গেলে, মানব জীবনটাই যেন বাঁশময়। কিন্তু আমরা মর্যাদা দেবার বেলায়! হ্যা, এক্ষেত্রে যেনো কোনোকিছুতেই কোনোরকম তফাৎ নাই। কবরের বাঁশ টয়লেটের বাঁশ একই মর্যাদার! কিন্তু আসলে কি তাই? আমরা কি পার্থক্যটা আদৌ বুঝি? নাকি কখনো বুঝতে চাই? মোটেই না! মনে করি একই ঝাড়ের (একই বাবার সন্তান) বাঁশ! এতে আর ব্যতিক্রম কি? হয়তো একজন বয়সে বড় আরেকজন ছোট, তাতেই-বা কি? মূলত তো একই বাবার সন্তান। একই ঝাড়ের বাঁশ যেমন, একই বাবার সন্তান তো তেমনই হবে! কিন্তু এই যুক্তিটা কি কদ্যপিও সঠিক?
—
আমরা ভুল চলা/বোঝার ক্ষেত্রে বেশ পারঙ্গম। এজন্যই হয়তোবা এতোখানি উপকারী বস্তুটিও আমাদের ক্ষতি করতে একটুও ভুল করে না! ঐ যে আগেই বলেছিলাম প্রবাদে একটা কথা অাছে, ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস’। অর্থাৎ বাঁশ অতিশয় উপকারি হয়েও এটি যথা সময়ে আর যথা নিয়মেই আমাদেরকে একদম ঠিকঠাকই পাইয়ে দিয়ে থাকেই। আর তাইতো আমরা সদা-সর্বদায়ই বাঁশ খাই! আবার বাঁশ পাই! হ্যা, আবার মাঝেমধ্যে কিন্তু বাঁশ দেইও!
এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, গ্রন্থাগার সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।