সোমবার ১১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর শেষ হবে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে। এ বছর দেবীদূর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবছরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার এবছর ৫৮০টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। গত বছর এই জেলা ৫৫৫টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব করা হয়, সেই তুলনায় এ বছর ২৫টি পূজামন্ডপ বেড়েছে। এরমধ্যে জেলা সদরে ৭৬টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৫৫টি, সরাইল উপজেলায় ৪৮টি, কসবা উপজেলায় ৪৭ টি, আখাউড়া উপজেলায় ২২ টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি, বিজয়নগর উপজেলায় ৫৭টি, নবীনগর উপজেলায় ১২১টি, ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪১টি মন্ডপে এই বছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যস্ততা বাড়ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের। উৎসবকে ঘিরে মন্ডপে মন্ডপে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মন্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার কাজ। রঙের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বর্ণিল সাজে। মৃৎশিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। মৃৎশিল্পীরা প্রতিমাকে রঙতুলির নিপুন আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলার কাজ করছেন। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী আর সরস্বতী দেবীকেও।
এদিকে ভক্তরারা দেবী দুর্গার রাতুল চরণে পুস্পাঞ্জলী দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তারা বলছেন মায়ের আগমনের ক্ষণকালে ভক্তরা সকলেই পুলকিত। ভক্তদের মনে লেগেছে আনন্দের দৌলা।
শহরের পূর্ব পাইকপাড়ার গৃহবধূ ঈশিতা চক্রবর্তী জানান, মায়ের আগমন উপলক্ষ্যে আমরা সবাই বেশ খুশি। পরিবারের সকলের জন্যে কেনাকাটা করেছি। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলী প্রদান করবো। মহামারী করোনার প্রভাব কাটিয়ে আমরা যেন আবারো আপন ভূবনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি সেই প্রার্থনা করবো।
শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ শিপ্রা বিশ্বাস বলেন, দুর্গা মায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে আমরা নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এবার জগৎ জননী মায়ের কাছে দেশের জন্য দশের জন্য প্রার্থনা করবো মা যেন সকল রোগ শোক থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখেন।শহরের পূর্ব পাইক পাড়ার গগন সাহাবাড়ী রোড সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা বলেন, এ বছর মায়ের আগমনে আমরা অনেকটাই পুলকিত। মায়ের আগমনী বার্তার সাথে সাথে করোনার প্রভাব এবং আক্রান্তের হার অনেকটাই কমে গেছে। আমরা সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে পূজার আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। মন্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। কিছুটা সাজসজ্জার কাজ চলছে। এখন অপেক্ষা ক্ষণকাল গননা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার রঘুনাথ জিউর আখড়ার প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু পাল বলেন, গত বছর ১৯টি মূর্তির অর্ডার পেয়েছিলাম। এবছর ২৭টি মূর্তির অর্ডার পেয়েছি।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের মৃৎশিল্পী বরেন পাল জানান, দুর্গাপূজার আর মাত্র দুই দিন বাকি। শেষ মুহুর্তে আমরা প্রতিমার গায়ে সাজসজ্জা করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিমা তুলে দিতে হবে। সেজন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।
মলাই চন্দ্র পাল নামে অপর এক মৃৎশিল্পী জানান, কাজ শেষ হতে এখনও বাকি আছে। যার কারণে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছি। তিনি বলেন, গতবার ৩২টি প্রতিমা তৈরী করেছিলাম। এবার ৪২ প্রতিমা তৈরী করছি।
এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদপাপন পরিষদের সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায় জানান, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৮০টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। গত বছরের মতো এবছরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব উদযাপনের সব প্রস্তুতি গ্রহন করেছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্নভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পূজামন্ডপে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সেই সাথে আনসার ও ভিডিপি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। মন্ডপ এলাকায় ঝামেলা এড়াতে সকল প্রকার মোটর সাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সাংবাদিক এবং আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিমা তৈরী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত যতগুলো অনুষ্ঠান আছে সেগুলো সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগীতা করবো।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে পূজামন্ডপ ও জনসমাগম স্থলে টহল জোরদার করা হবে। পূজামন্ডপ এলাকায় আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং মাইক ব্যবহার করা যাবে না। শুধু ধর্মীয় সঙ্গীত নিয়ন্ত্রিত শব্দে বাজানো যাবে। (সরোদ)