ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন জান্নাতুন। মাঝপথে উঠে প্রসব ব্যথা। এগিয়ে আসেন ট্রেনেই থাকা এক চিকিৎসক। তার সহযোগিতার হাত বাড়ান ট্রেনের যাত্রী থেকে শুরু করে, চালক, পরিচালক, সহকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জান্নাতুন চলন্ত ট্রেনেই সন্তানের জন্ম দেন।
পৃথিবীতে আসার পর শিশুটি দেখল মানবসেবার এক অন্যতম উদাহরণ। শিশুটির জন্য অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি দিল বিরতিহীন এই ট্রেনটি। আগে থেকেই তৈরি ছিলেন, স্টেশন মাস্টার, রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি, স্টেশন এলাকার দোকানি।
হাসপাতালে আনার পর আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেন চিকিৎসক ও নার্স। সুস্থ মা সন্তানকে নিয়ে আবার চট্টগ্রামের পথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঘটনাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে। রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে জান্নাতুন নামে ওই যাত্রী এই ট্রেনে তার সন্তানের জন্ম দেন।
ট্রেনটি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর স্টেশনের কাছাকাছি ছিল। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনটির অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি দিয়ে মা ও সন্তানের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এ ব্যবস্তা নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার সময় ‘ড’ বগিতে থাকা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার বাসিন্দা মো. ইকবালের স্ত্রী জান্নাতুন প্রসব ব্যথা অনুভব করেন। এ সময় ওই বগিতে থাকা এক চিকিৎসক এগিয়ে এসে তাকে স্বাভাবিক প্রসব করান। ওই চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে শিশুটির নাভিতে নির্দিষ্ট কর্ড ক্লিপের বদলে চুলের ক্লিপ আটকে দেন।
এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ট্রেনের দুই পরিচালক মো. জুবায়ের, নুরুল আমিন লিটন ও চালক মো. রাসেল মুন্সী, সহকারী চালক মো. মেজবাহ উদ্দিনকে জানানো হয়। তাঁদের মাধ্যমে বিষয়টি ঢাকায় রেলওয়ের কন্ট্রোলকে অবগত করা হয়। কন্ট্রোলের নির্দেশে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি দেয়। এরই মধ্যে আগে থেকেই সেখানে অটোরিকশা ঠিক করে রাখা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. জসিম উদ্দিনসহ রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, পয়েন্টসম্যান শাহরিয়ার হোসেন ইমন, ডালিম নামে স্টেশনের এক দোকানির সহযোগিতায় মা ও সন্তানকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
নবজাতকের বাবা মো. ইকবাল এ প্রতিবেদককে জানান, আগামী মাসে সন্তানের প্রসবের তারিখ ছিল তার স্ত্রীর। তবে ট্রেনে করে যাওয়ার পথে হঠাৎ তার প্রসব ব্যথা ওঠে। এরি মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে এক চিকিৎসক তার স্ত্রীর সন্তান প্রসব করান। এরপর মা ও সদ্যোজাত মেয়ের জরুরি চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণাবড়িয়া ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তারা সাথে সাথেই বেরিয়ে জান। রাতের তূর্ণা নিশিথা ট্রেনে তারা চট্টগ্রাম চলে যাবেন বলে জানান।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটির কোনো নাম রাখা হয়নি বলে তিনি জানান। মো. ইকবাল ট্রেনে সহায়তাকারী চিকিৎসকের নামও বলতে পারেননি।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স স্মৃতি রানী রায় জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ট্রেনে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটিকে ক্লোরো হেক্সিটিন দেওয়া হয়। নাভিতে দেওয়া চুলের ক্লিপের বদলে কর্ড ক্লিপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. তাজুল ইসলাম জানান, ট্রেনেই শিশুটির জন্ম হয় বলে জানানো হয়েছে। তারপর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মা ও মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা সেটা না করে চলে গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কন্ট্রোল থেকে খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় তারপর মা ও মেয়েকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ট্রেনটি পাঁচ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।’