ভরণপোষণের টাকা না দেয়ায় শিশুকে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠায় মা

সারাদেশ, 3 August 2022, 144 বার পড়া হয়েছে,

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে রাগ করে দেড় বছরের শিশুকে নির্যাতন করেন। এর ভিডিও করে স্বামীকে পাঠান। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নির্যাতিত ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুধবার দুপুরে মা-সহ ওই শিশুকে আদালতের হেফাজতে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, ৩ বছর পূর্বে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আ. করিমের পুত্র প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সঙ্গে শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তারের (২৩) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফাহাদ (২) নামে একটি শিশুপুত্র রয়েছে। বিয়ের ১ বছর পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে স্ত্রী পারভীন আক্তার পিত্রালয়ে থাকার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বহু দেন দরবারের পর লিগ্যাল এইড কার্যালয়, চাঁদপুরের সিদ্ধান্ত মতে ভরণপোষণ বাবদ প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতে পারায় সম্প্রতি পারভীন তাদের দুই বছরের শিশুপুত্র ফাহাদকে বর্বরোচিত নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠায়।

শিশুটির পিতা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্নজনকে অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিতে আসে।

মঙ্গলবার রাত ১টায় শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ন রশিদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে নিয়ে শিশুটির নানার বাড়ি হাড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারের বাড়িতে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন।

শিশুটির মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী বহু নারীতে আসক্ত। এসবের প্রতিবাদ করায় সে তাদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয়। স্বামীকে শিক্ষা দিতেই তিনি শিশু পুত্রকে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠিয়েছেন।

শিশুটির দাদা আ. করিম জানান, অনেক চেষ্টা করেও পুত্রবধূর উগ্র চলাফেরা বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ উদ্ধার না করলে আমার নাতিকে হয়তো মেরেই ফেলত।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিকটাত্মীয় বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিরাপত্তা হেফাজত নিশ্চিত করতে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতনকারী মাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ন রশিদ জানান, ভাইরাল ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে বাকি কাজ করা হবে।